Thank you for trying Sticky AMP!!

কুমিল্লায় জাতীয় পর্যায়ের নজরুলজয়ন্তী উৎসব। আজ বুধবার নগরের টাউন হল মাঠে

কুমিল্লায় তিন দিনব্যাপী নজরুলজয়ন্তীর অনুষ্ঠান শুরু

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লায় আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ের নজরুলজয়ন্তী উৎসব। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ওই উৎসব হচ্ছে। বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে উৎসবের উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

ছয় বছর পর কুমিল্লায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিক অনুষ্ঠিত হলো। ২৭ মে এই অনুষ্ঠান শেষ হবে। উৎসবকে ঘিরে নগরীর প্রধান সড়কগুলোয় তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।

Also Read: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী আজ

কুমিল্লায় জাতীয় পর্যায়ের নজরুলজয়ন্তী উৎসব উদ্বোধন করছেন অতিথিরা। আজ বুধবার নগরের টাউন হল মাঠে

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, আজ বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে কুমিল্লা টাউন হল মাঠের মঞ্চে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সংস্কৃতি  মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন, সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান, কবি নজরুলের পৌত্রী (নাতনি) খিলখিল কাজী। এতে স্মারক বক্তব্য রাখেন নজরুল গবেষক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রশাসক আবু তাহের, কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ এবং কবি নজরুলের নাতনি মিষ্টি কাজী।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি মুক্তি, সম্প্রীতি ও সাম্যের জয়গান গেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর গান ও কবিতা আমাদের উজ্জীবিত করে। ১৯৭২ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বলে বঙ্গবন্ধু কবিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধুর সেই সোনার বাংলায় আজ আমরা জাতীয় অনুষ্ঠান করেছি। কবি কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়ে থাকতেন। এ শহরে তাঁর বহু স্মৃতি।’

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, যুদ্ধকালে তাঁর রণসংগীত এই বাংলায় বেজেছে। তিনি অত্যাচারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা কবিতায় উল্লেখ করেন। সামাজিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাসান মাহমুদ। আজ বুধবার কুমিল্লা নগরের টাউন হল মাঠে

সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি কাজী নজরুল ইসলামের শেষ বক্তৃতা পাঠ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘কবি অঞ্জলি চেয়েছেন, প্রেম, ভালোবাসা ও সাম্যের জয়গান গেয়েছে। নানা ধরনের বঞ্চনার বিরুদ্ধে কবিতা লিখেছেন। কলকাতায় কবিকে আমি কাছ থেকে দেখেছি।’

কবির নাতনি খিলখিল কাজী বলেন, কুমিল্লা কাজী নজরুল ইসলামের আনন্দ-বেদনার স্মৃতিকাতর জায়গা। এখানে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কবি সমাজের অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। সমাজের অত্যাচার, অনাচার, কুসংস্কার এখনো বন্ধ হয়নি। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা কবির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁর কবিতা রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে। যুব সমাজের মাথা উঁচু করার প্রেরণা জুগিয়েছে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, কুমিল্লা ও কবি নজরুল ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কবির জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কুমিল্লায় কেটেছে। কুমিল্লায় ১৯৯২ সালে একবার, ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বার ও এবারসহ তিনবার জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে।

কুমিল্লায় জাতীয় পর্যায়ের নজরুলজয়ন্তী উৎসবে নৃত্য পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীরা। আজ বুধবার নগরের টাউন হল মাঠে

‘বিদ্রোহী’ কবিতার শতবর্ষ উপলক্ষে স্মারক বক্তব্যে নজরুল গবেষক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক বলেন, ১০১ বছর আগে লেখা ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশিত হয় এক বছর পর ১৯২২ সালে। যখনই মানবতা লাঞ্ছিত হয়, জাতীয় বিপর্যয় ঘটে, বিপদে, সংকটে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা অস্ত্রের ভাষায় প্রতিরোধের ভূমিকায় অকুতোভয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়।

পরে শত কণ্ঠে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার পাঠ, নাচ ও গান হয়। ২৬ মে বিকেল পাঁচটায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠের একই মঞ্চে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন। স্মারক বক্তৃতা দেবেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন। ২৭ মে সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। সমাপনী দিনের স্মারক বক্তৃতা দেবেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহ। প্রতিদিনই আলোচনা সভার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। এতে নজরুলের গান, কবিতা, নাচ, নাটক, হামদ, গজল ও কীর্তন পরিবেশিত হবে।
আরও পড়ুন