Thank you for trying Sticky AMP!!

কুষ্টিয়ায় করোনায় আরও চারজনের মৃত্যু, বাড়ছে বিধিনিষেধ

করোনাভাইরাস

কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে (বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা) নতুন করে আরও ১৫৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাকালে জেলায় এক দিনে এত শনাক্ত ও মৃত্যু এটাই প্রথম।

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়া পৌরসভায় সাত দিনের বিধিনিষেধ চলছে। আজ শুক্রবার মধ্যরাতে তা শেষ হচ্ছে। এমন অবস্থায় এই বিধিনিষেধের সময় বাড়িয়ে আজই নতুন গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। এবারের বিধিনিষেধ আরও কঠোর হবে বলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫৬ জন পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ২২৮টি এবং অ্যান্টিজেন টেস্ট ১৭১টি নমুনার মধ্যে যথাক্রমে ৮৩ ও ৭৩টির রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। আক্রান্ত লোকজনের মধ্যে সদরে ৭৭ জন, কুমারখালীতে ২৮ জন, দৌলতপুরে ১৭ জন, ভেড়ামারায় ১০ জন ও মিরপুর উপজেলায় ১৯ জন আছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এ পর্যন্ত জেলায় কখনোই এক দিনে শতাধিক রোগী শনাক্ত হয়নি। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় দেড় শতাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এটা অত্যন্ত ভয়াবহ।

কুষ্টিয়া ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। তাই শনিবার থেকে সাত দিনের জন্য কুষ্টিয়া পৌরসভায় কঠোর লকডাউন দিতে হবে। এবং সেটা প্রশাসনকে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
মাহবুব উল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাংসদ

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত দুই দিনে মেডিসিন বিভাগের দুজন চিকিৎসকসহ তিনজন চিকিৎসক আক্রান্ত হলেন। এতে হাসপাতালে চিকিৎসকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন করোনা রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এ জন্য বৃহস্পতিবার ৭৪ শয্যার জায়গায় ১০০ শয্যা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সেখানে ৮২ জন পজিটিভ ও ৩০ জন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। রোগী ভর্তির হার বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে জরুরি রোগী ভর্তি ছাড়া অন্য কোনো রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না।

কঠোর লকডাউনের আহ্বান সাংসদের

জেলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভার্চ্যুয়ালি আয়োজিত এই সভায় কমিটির উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, রোগী শনাক্তের হার দেখে তিনি হতাশ, কুষ্টিয়া ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। তাই শনিবার থেকে সাত দিনের জন্য কুষ্টিয়া পৌরসভায় কঠোর লকডাউন দিতে হবে। এবং সেটা প্রশাসনকে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

সভায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন বলেন, ‘দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। চিকিৎসকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড ঘোষণা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।’

সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘শহর থেকে প্রায় প্রতিটি গ্রামে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। এবং এটা ভারতীয় ডেলটা প্রকৃতির। কেননা আইসোলেশন ওয়ার্ডে এর আগে রোগীদের এটেনডেন্টরা কখনো আক্রান্ত হননি। কিন্তু এখন হচ্ছেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে এটা ভারতীয় ধরন। গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে যাওয়ায় সামনে বিশাল জনগোষ্ঠী পজিটিভ শনাক্ত হতে যাচ্ছে। এতে মৃত্যু বাড়ারও আশঙ্কা করছি।’

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এ এস এম মুসা কবির করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় আসোলেশনে আছেন। তিনি ভার্চ্যুয়ালি এই সভায় যুক্ত হয়ে বলেন, হটলাইন চালু করতে হবে। যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের প্রত্যেককে ফোনে অডিও বা ভিডিও কলে ব্যবস্থাপত্র নিশ্চিত করতে হবে। এতে হাসপাতালে কিছুটা চাপ কমবে। অনেকে অল্পতেই হাসপাতালমুখী হচ্ছে। মানুষকে ঘর থেকে বের না হতে যা যা প্রয়োজন, তার সবটুকু প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া কোনোভাবেই করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ কমানো যাবে না।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার খাইরুল আলম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সালেক মাসুদ, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার, কুষ্টিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহীন উদ্দীন প্রমুখ।