Thank you for trying Sticky AMP!!

কুষ্টিয়ায় কালবৈশাখীর তাণ্ডব, বাড়িঘর–ফসলের ক্ষতি

প্রায় আধা ঘণ্টার এই ঝড়ে জেলার প্রায় সব কটি উপজেলায় গাছগাছালি ও আধাপাকা ঘর ক্ষতি হয়েছে। আজ সকালে মিরপুর উপজেলার সদরপুর এলাকায়

সকালে কুষ্টিয়ার আকাশে সূর্যের আলো উঁকি দিতে না দিতেই অন্ধকার নেমে আসে। এ সময় কালবৈশাখীর আঘাতে জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ শনিবার ভোর সোয়া পাঁচটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত জেলাজুড়ে কালবৈশাখীর তাণ্ডব চলে।

মিরপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই তিন ইউনিয়নে শতাধিক মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। পুরো এলাকা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ এলাকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। আমি নিজে প্রতিটি ইউনিয়ন ঘুরে ক্ষয়ক্ষতি দেখছি। বিশেষ করে সদরপুর, আমলা ও ছাতিয়ান—এই তিনটি ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এলাকার বড় বড় গাছ উপড়ে ও ভেঙে সড়কে পড়ে আছে। সেগুলো সরানোর কাজ চলছে। এ ছাড়া আমবাড়িয়া এলাকায় এক নারী দেয়াল চাপা পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ছে।’

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে পশ্চিম দিক থেকে ঝড় শুরু হয়। এই ঝড়ের গতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। প্রায় আধা ঘণ্টার এই ঝড়ে জেলার প্রায় সব কটি উপজেলায় গাছগাছালি ও আধাপাকা ঘর ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ে মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফলের গাছ ভেঙে পড়েছে। গাছের ডাল পড়ে কিংবা খুঁটি ভেঙে অনেক স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে।

পোড়াদহ রেলস্টেশনের মাস্টার শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মিরপুর উপজেলার হালসা এলাকায় রেললাইনের ওপর গাছ পড়েছিল। এ কারণে খুলনা–রাজশাহী রুটে সকাল ছয়টা থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত চার ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।

মিরপুরের তিন ইউনিয়নের শতাধিক মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন

কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জানে আলম বলেন, কালবৈশাখীর কারণে সড়কের দুই পাশে শত শত গাছ ও গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় এলাকাবাসীর সহায়তায় আবার কোথাও কোথাও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাছগুলো সড়ক থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন।

কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, কালবৈশাখীর সময় জেলাজুড়ে অন্তত ৪ লাখ ১০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। অন্তত ২২৯টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও উপড়ে পড়েছে। একাধিক জায়গায় তার ছিঁড়ে গেছে। এগুলো মেরামত করতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে।

মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, মিরপুর উপজেলার সদরপুর, আমলা, ছাতিয়ানসহ কয়েকটি ইউনিয়নে হাজার হাজার গাছ ভেঙে পড়েছে। কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে ভাঙা গাছ পড়ে থাকায় দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেখানে প্রায় ৮ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল।

কালবৈশাখীর সময় জেলাজুড়ে অন্তত ৪ লাখ ১০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, ঝড়ে আম, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়নি। তবে কৃষি বিভাগের লোকজন মাঠে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ করছেন।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, জেলায় কালবৈশাখীর খবর পাওয়ামাত্রই প্রত্যেক উপজেলায় ইউএনও, চেয়ারম্যানসহ ইউপি সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। সাধ্যমতো খাবার, চাল দিয়ে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বের করতে আরও সময় লাগবে।