Thank you for trying Sticky AMP!!

কৃষকের দিশা 'মাটির হাসপাতাল'

দিনাজপুর সদর উপজেলার রানীগঞ্জ থেকে মোকলেসুর রহমান এসে ঢুকলেন মৃত্তিকা ভবনে। হাতে মাটিভর্তি চারটি পলিব্যাগ। প্রতিটি ব্যাগে নাম–ঠিকানা লেখা চিরকুট। জানালেন, এবার তিন বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করবেন। তাই জমির বতর্মান অবস্থা জানতে মাটি পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে এসেছেন দিনাজপুর মৃত্তিকা গবেষণাগারে। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন আরও তিনজনের জমির মাটি।

ভবনে ঢুকতেই চোখে পড়ে টেবিলের ওপর সাজানো মাটিভর্তি শ খানেক পলিথিনের ব্যাগ। মোকলেসুর রহমানের মতো অনেকেই আসেন এখানে তাঁদের জমির মাটি পরীক্ষা করাতে। দিনাজপুর শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর–রংপুর মহাসড়কের পাশে সাত মাইল এলাকায় এক একর জমির ওপরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেবা ও গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। অনেক কৃষকের কাছে প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে ‘মাটির হাসপাতাল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে কৃষকেরা আসেন তাঁদের জমির মাটি নিয়ে। চিরকুটে লিখে দেন নিজের নাম–পরিচয় আর কোন ফসলের চাষ করতে চান তা। সেই মোতাবেক মাটি পরীক্ষা করে এক সপ্তাহ পরে মৃত্তিকা ইনস্টিটিউট থেকে দেওয়া হয় পরামর্শ কার্ড।

দেশের সীমিত ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদের যুক্তিযুক্ত ও লাভজনক ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে। মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলেন, মাটি হলো ফসলের খাদ্যভান্ডার। কিন্তু অপরিকল্পিত ব্যবহারের কারণে মাটির উর্বরতা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। মাটির উর্বরতা সংরক্ষণসহ ফসলের কাঙ্ক্ষিত ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাটি পরীক্ষা করে সুষম সার প্রয়োগ নিশ্চিত করার ওপর তাই জোর দেওয়া হচ্ছে।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সফিনুর রহমান বলেন, কৃষক প্রথমে জমির আইল থেকে তিন-চার হাত ভেতরে সমদূরত্ব বজায় রেখে নয়টি স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ করে পলিব্যাগে করে গবেষণাগারে নিয়ে আসেন। তারপর সেই মাটিকে গুঁড়ো করে শুকানো হয়। শুকনো মাটি পরিমাণমতো নিয়ে এতে বিদ্যমান ১৩টি উপাদান যেমন নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, জিংক, বোরন, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, মলিবডেনাম, কোবাল্ট, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, জৈব পদার্থ—এই উপাদানগুলো পৃথকভাবে পরীক্ষা করা হয়। কয়েকটি যন্ত্রে মাটি পরীক্ষা করে তার ফলাফল নমুনা প্রদানকারীর নামে প্রস্তুতকৃত সুপারিশ কার্ডে উল্লেখ করা হয়। মৃত্তিকা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের নথি থেকে জানা যায়, ২০০২ সাল থেকে গেল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কৃষকদের নিয়ে আসা ৩৬ হাজার ২৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করে সুপারিশ কার্ড দেওয়া হয়েছে। সাধারণত তিন ধরনের উপকারভোগী এই প্রতিষ্ঠান থেকে মাটি পরীক্ষা করার জন্য আসে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কৃষক। আর এই মাটি পরীক্ষা করার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নমুনাপ্রতি নেওয়া হয় ৬১৫ টাকা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ হাজার ২১০ টাকা ও সাধারণ কৃষকের কাছ থেকে ৬৩ টাকা। চিরিরবন্দর উপজেলার আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের বড়গ্রাম এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চাষ করে সুফল পাই। আগে যেখানে বিঘাপ্রতি ১০০ মণ আলু পেতাম, গেল মৌসুমে পেয়েছি ১৬০ মণ। আগে বিঘাপ্রতি আমন পেতাম ২৫ মণ, এবার সেখানে ৪০ মণেরও বেশি ধান পেয়েছি।’

ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সফিনুর রহমান বলেন, গবেষণায় দিনাজপুরের বিভিন্ন জায়গার মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার, জিংক, বোরন, ম্যাগনেশিয়াম ও জৈব পদার্থের অভাব দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া, এ এলাকার মাটিতে অম্লত্বের অভাব রয়েছে। তাই যেকোনো ফসলের চাষের আগে কৃষক মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাবেন।