Thank you for trying Sticky AMP!!

কোথা হতে এলি রে শিশু জাদুকর?

কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতকটিকে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে কোলে নিয়ে আদর করছেন জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন। ছবি: প্রথম আলো

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘শিশু জাদুকর’ কবিতায় শিশুকে নিয়ে অপার বিস্ময়ে লিখেছেন, পার হয়ে কত নদী কত সে সাগর/ এই পারে এলি তুই শিশু জাদুকর। বাস্তবের শিশুটি জাদুর মতো আবির্ভূত হয়েছে বটে, তবে তা মোটেও কোনো আনন্দদায়ক ঘটনা নয়। কারণ কন্যাশিশুটি অনাদরে পড়ে ছিল এক ব্যবসায়ীর ফটকের সামনে।

পঞ্চগড় পৌরসভার কামাতপাড়া এলাকার এই ব্যবসায়ী অশোক চন্দ্র মোদক। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর বাড়ির সামনে থেকে ফুটফুটে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। বয়স আনুমানিক এক মাস। পরনে ছিল কমলা রঙের জামা, কপালের বাম দিকে কাজলের কালো টিপ। মুড়িয়ে রাখা হয়েছিল একটি পরিষ্কার তোয়ালেতে।
জুলেখা বেগম নামের স্থানীয় এক নারী প্রথমে শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। ডাক দেন তাঁর ছেলে জুয়েলকে। এরপর ঘটনা দেখে কাছে আসেন মোজাম্মেল হক নামের আরেক ব্যক্তি। শিশুটিকে দেখতে এভাবেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। এরই মধ্যে খবর দেওয়া হয় পঞ্চগড় সদর থানার পুলিশকে। পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে।

শহরজুড়ে বেওয়ারিশ শিশু পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে বাড়তে থাকে উৎসুক মানুষের ভিড়। শিশুটিকে দত্তক নিতে বাড়তে থাকে নিঃসন্তান দম্পতির সংখ্যা।

খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলীসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এরপর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে রাখা হয় শিশুটিকে। সেখানে রোগী নিয়ে আসা মায়েদের মাধ্যমে তার খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

রাত ১০টার দিকে শিশুটির মায়ের সন্ধান পাওয়া গেছে—এমন খবরে আবারও কামাতপাড়া এলাকায় ছুটে যায় পুলিশ। তাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারও যান সেখানে।

কামাতপাড়া এলাকার পেয়ারা মজুমদার নামের এক গৃহবধূর ভাষ্য, প্রায় দুই বছর আগে রিমু আক্তার নামের এক তরুণী স্বামীকে নিয়ে এই এলাকায় ভাড়া থাকতেন। তখন তাঁর একটি পুত্রসন্তান ছিল। পরে তিনি অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে এলাকা থেকে চলে যান। দীর্ঘদিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে পেয়ারার বাড়িতে আসেন রিমু। সঙ্গে তাঁর তিন বছরের ছেলেটি এবং কোলে একটি ফুটফুটে নবজাতক ছিল। রিমু তাঁর কোলের সন্তানটি পেয়ারাকে দিতে চাইছিলেন। পেয়ারা বাড়িতে মেহমান থাকায় ব্যস্ততার কথা বলে তাঁকে চলে যেতে বলেন। পরে তিনি জানতে পারেন, পাশের বাড়ির দরজার সামনে একটি শিশু পাওয়া গেছে।
পেয়ারা বলছেন, রিমুর কোলের শিশুটিও তোয়ালে দিয়ে মোড়ানো ছিল। কপালে কাজলের টিপ ছিল। এই শিশুটি রিমুর কোলে থাকা শিশুটিই হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।

পেয়ারার বর্ণনা শুনে পুলিশ রিমু আক্তার নামে ওই নারীকে খুঁজতে শুরু করে। তবে গভীর রাত পর্যন্ত শহরের কোথাও ওই নারীকে খুঁজে পায়নি পুলিশ।
হাসপাতালে থাকা শিশুটির বিষয়ে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মঈন খন্দকার বলেন, শিশুটির বয়স এক মাস হতে পারে। তার শারীরিক কোনো সমস্যা এ মুহূর্তে নেই। তবে তার জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো মায়ের দুধ।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘আগে আমরা শিশুটির পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আমরা বিভিন্ন থানায় এই তথ্য পাঠিয়েছি। শিশুটির প্রকৃত অভিভাবক খুঁজে পেলে ওকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘কোনো মা যদি কোনো কারণে শিশুটিকে এভাবে রেখে যান, তবে তা খুবই দুঃখজনক। এই ফুটফুটে বাচ্চার ভবিষ্যৎকে সুন্দর করা আমাদের দায়িত্ব, রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা চেষ্টা করছি শিশুটিকে তার প্রকৃত মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে।’