Thank you for trying Sticky AMP!!

কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছুটছে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট, রাজবাড়ী, ৬ আগস্ট। ছবি: এম রাশেদুল হক

আর পাঁচ দিন পরই ঈদুল আজহা। এরই মধ্যে সড়ক-মহাসড়ক, হাটবাজার ও পথেঘাটে শুরু হয়ে গেছে কোরবানির ঈদের আমেজ। কোরবানির পশু নিয়ে ব্যবসায়ীরা ছুটছেন হাটগুলোতে। পশুর চাহিদা বেশি থাকায় তাঁদের অধিকাংশের গন্তব্য রাজধানী ঢাকা। তাই রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে এরই মধ্যে চলে এসেছে পশুবাহী শতাধিক ট্রাক।

মঙ্গলবার বিকেলে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে দেখা যায় কয়েক শ যানবাহনের লম্বা লাইন। এর মধ্যে অধিকাংশই কোরবানির পশুবাহী ট্রাক। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকগুলো এসেছে। গরুবোঝাই এসব ট্রাক এক-দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফেরিতে উঠছে।

দেখা যায়, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে মহাসড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিল অসংখ্য যানবাহন। এর মধ্যে বেশির ভাগই কোরবানির পশুবাহী ট্রাক এবং যাত্রীবাহী বাস। পাশাপাশি ছিল সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস পার হতে দেখা যায়। এসব ট্রাক ও বাস ডান পাশের সড়ক দিয়ে বেশ দ্রুত ফেরিতে উঠছে। তবুও ফেরিস্বল্পতা ও গাড়ির চাপের কারণে পশুবাহী ট্রাকগুলোকে ঘণ্টা দু-এক আটকে থাকতে হচ্ছে।

ফরিদপুর জেলার সদরপুর থেকে আকরাম হোসেন ছোট-বড় ৯টি গরু নিয়ে যাবেন ঢাকায়। তিনি বলেন, ‘এক ঘণ্টার বেশি সময় লাইনে অপেক্ষায় আছি। অন্য কোনো সমস্যা না থাকলেও প্রচণ্ড রোদে গরুগুলোর কষ্ট হচ্ছে।’

মেহেরপুর জেলা থেকে ১৬টি গরু নিয়ে ঢাকার গাবতলীর পশুর হাটে যাবেন খসরু শেখ। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও দুজন। খসরু শেখ বলেন, ১৬টি গরুর মধ্যে কয়েকটি নিজের বাড়ির। কিছু গরু আশপাশের এলাকা থেকে কেনা। মেহেরপুরে মনমতো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ভালো দামের আশায় ঢাকায় গরুগুলো নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

পশুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরিতে ওঠার কারণে সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাকগুলো দীর্ঘ সময় আটকে থাকছে। যশোর থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকচালক আবুল হাসেম বলেন, গতকাল (সোমবার) বিকেল থেকে ঘাটে। সারা রাত অপেক্ষার পর আজ (মঙ্গলবার) বিকেলেও ফেরিতে ওঠা যায়নি। এক দিন পরই সাধারণ পণ্যবাহী যানবাহন পারাপার বন্ধ হয়ে যাবে। তাই দ্রুত পার হতে না পারলে আরও বিপদে পড়তে হবে।

এ দিকে ঈদ সামনে রেখে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ বাহিনী, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই মধ্যে ঘাট এলাকার সড়কের ছোটখাটো গর্ত সংস্কার করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঘাট এলাকার সংযোগ সড়ক সংস্কার ও প্রয়োজনীয় স্থানে লাইটিং ব্যবস্থা করেছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ঘাট এলাকার শৌচাগারগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। এ ছাড়া একাধিক শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরির সংখ্যা বাড়িয়ে ১৮টি করা হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে আরও দুটি ফেরি দৌলতদিয়ায় আসবে। সব মিলিয়ে ঈদের সময় ২০টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হবে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, আজ ১৮টির মধ্যে ১৭টি ফেরি সচল রয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুদিন আগে বিকল হয় ছোট ফেরি মাধবীলতা। সকালে ফেরিটি সচল হয়। কিন্তু সকালেই আরেকটি ছোট ফেরি বনলতা অচল হয়ে যায়। আজ রাতের মধ্যে বনলতার ত্রুটি সারানো যেতে পারে। তবে ডকইয়ার্ড থেকে আরও একটি বড় ফেরি বহরে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। দুদিনের মধ্যে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে মোট ২০টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করানো যাবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত বলেন, যাত্রী এবং যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন থেকে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলায় ঈদ প্রস্তুতির একাধিক সভায় ঘাটসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। জেলার একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘাট এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। আশা করা যায়, ঈদুল ফিতরের মতো এবারের ঈদ যাত্রায় সমস্যা হবে না।