Thank you for trying Sticky AMP!!

খালিয়াজুরিতে ত্রাণ পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে ১২ শ পরিবারে

নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার ছয় ইউনিয়নের ১২ শ পরিবারে ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সাজ্জাদুল হাসান

মানুষের বাড়িতে কাজ করে টাকা জমিয়ে ও ধারদেনা করে মাস তিনেক আগে একটি টিনের ঘর করেছিলেন সনু মিয়া ও মনোয়ারা দম্পতি। কিন্তু বন্যার পানিতে ভেসে গেছে সেই ঘর। ঠাঁই নিয়েছিলেন আশ্রয়কেন্দ্রে। পানি কমায় গত শনিবার দুপুরে বাড়িতে ফেরেন তাঁরা। ঘর না থাকায় প্রতিবেশীর একটি গোয়ালে থাকছেন। এখন তীব্র খাদ্যসংকটে ভুগছেন তাঁরা।

নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার রূপনগর গ্রামে বাড়ি ওই দম্পতির। বুধবার দুপুরে মনোয়ারার হাতে একটি ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব ও বাংলাদেশ বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন মনোয়ারা।

Also Read: নেত্রকোনায় এখনো পানিবন্দী ৬৪ হাজার পরিবার, আশ্রয়কেন্দ্রে ২৪ হাজার মানুষ

ত্রাণ পেয়ে মনোয়ারা বলেন, ‘বন্যায় প্রায় দুই হপ্তা ধইরা কষ্ট করতাছি। আশ্রয়কেন্দ্র থাইক্কা পাঁচ দিন হয় বাড়িত আইছি। ঘরদুয়ার সব ভাসাইয়া লইয়া গেছে, মাইনসের গোয়াইল গরে থাহি, খাওন নাই। কেউ কোনোতা লইয়া আমরার কাছে আইয়ে না। আইজ মেলা (অনেক) কিছু সাহায্য পাইলাম। কয়েক দিন খাওন যাইব।’

রূপনগরের পাশের গ্রাম সিদ্দিকপুরের দিনমজুর খায়রুল ইসলাম (৪২) বলেন, এক সপ্তাহ পানিবন্দী অবস্থায় ঘরের মধ্যে ছিলেন। এখন পানি নামলেও খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। কোথাও কোনো কাজ পাচ্ছেন না, কেউ ধারও দিচ্ছেন না। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টে আছেন। ত্রাণ পেয়ে অনেক খুশি হয়েছেন তিনি।

Also Read: ‘নতুন দুইডা ঘর বানাইছিলাম, বন্যার পানি ভাসাইয়া নিল’

মনোয়ারা ও খায়রুলের মতো ত্রাণ পেয়ে খালিয়াজুরি উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের এমন ১২ শ পরিবারের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সাজ্জাদুল হাসানের নিজ উদ্যোগে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও এলাকায় গিয়ে বানভাসি অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়। ত্রাণের প্রতিটি প্যাকেটে ছিল ১০ কেজি চাল, ১ লিটার তেল, ১ কেজি করে আলু, ডাল, পেঁয়াজ, লবণ, সুজি, চিনি, ২০০ গ্রাম গুঁড়া দুধসহ বিভিন্ন সামগ্রী।

দুই দিনব্যাপী এ ত্রাণ বিতরণকালে সাজ্জাদুল হাসানের সঙ্গে জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার রায়, খালিয়াজুরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নূর খান, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Also Read: খালিয়াজুরির পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে সেনাবাহিনীর তৎপরতা

খালিয়াজুরি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জোসেফ সিদ্দিকী বলেন, বন্যায় খালিয়াজুরির অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দী। আশ্রয়কেন্দ্রেও অনেক মানুষ আছে। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ত্রাণ পেয়ে বন্যার্ত ১২ শ পরিবারে হাসি ফুটেছে।

ইউএনও এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ আছে। তাদের মধ্যে ৫৮৩টি শিশু ও ৫৪ জন প্রতিবন্ধী। এ ছাড়া ১৮ হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ৯১ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও ৯০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।