Thank you for trying Sticky AMP!!

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চাকরিচ্যুত’ তিনজনের জন্য আন্দোলনে শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা

তিন শিক্ষককে বরখাস্ত ও অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিবাদ সমাবেশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে বরখাস্ত ও দুই শিক্ষককে অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা দুইটার দিকে মুক্তমঞ্চে সমাবেশ করেন শিক্ষকেরা।

পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘উসকানি’ দেওয়ার অভিযোগে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজলকে বরখাস্ত, একই ডিসিপ্লিনের প্রভাষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরীকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ২১২তম সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সমাবেশের আয়োজন করে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ নামের একটি সংগঠন। ওই সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো তিন শিক্ষকের প্রতি সমর্থন জানান বেশ কয়েকজন শিক্ষক। সমাবেশে শিক্ষকেরা উপাচার্যের সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনি (উপাচার্য) বলছেন সব সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট নিয়েছে। তাহলে আমরা আপনাকে আহ্বান করব, একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান। শিক্ষকদের মানহানির প্রতিবাদ করুন।’

শিক্ষক নেতারা আরও বলেন, তিন শিক্ষককে শাস্তি দেওয়া সিন্ডিকেটের ওই সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছেন দুই সিন্ডিকেট সদস্য। তাই অবিলম্বে ওই শিক্ষকদের সাজা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান তাঁরা।

প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাবি নিয়েই আন্দোলন শুরু করেছিলেন। আর তাঁদের ওই আন্দোলনে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগে তিন শিক্ষকের ওপর খড়্গহস্ত নেমে এসেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাঁদের ওই শাস্তি ইঙ্গিত দেয় পরবর্তী সময়ে কেউ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালে তাঁদেরও বরখাস্ত করা হবে। তাঁরা দ্রুত ওই তিন শিক্ষকের সাজা প্রত্যাহার করার দাবি জানান।

তিন শিক্ষককে বরখাস্ত ও অপসারণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের শেষ কার্যদিবস ছিল। ওই দিন দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারাদেশ ‘মওকুফের’ চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে সেটি নিয়েও দুই শিক্ষার্থী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেন, দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার দপ্তর থেকে চিঠিটি নিয়ে আসেন। কিন্তু ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘বিশেষ বিবেচনায় বহিষ্কারাদেশ মওকুফ করা হলো’। তাঁরা ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন, ক্ষমা চাননি। তাই ‘মওকুফ’ শব্দটির ব্যবহারে তাঁদের আপত্তি রয়েছে। তাঁরা বহিষ্কারাদেশ ‘প্রত্যাহার’ চেয়েছিলেন।

চিঠি পাননি তিন শিক্ষক

উপাচার্যের শেষ কার্যদিবসের দিনেও সাজা দেওয়া ওই তিন শিক্ষককে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের কোনো চিঠি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ কারণে অনেকটা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন তাঁরা।

শিক্ষকেরা অভিযোগ করেন, নানা বাহানায় তাঁদের চিঠি দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ তাঁরা নিতে পারছেন না। তাঁরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানেনই না তাঁদের কী শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা বলেন, কোনো চিঠি না দিয়ে সংবাদমাধ্যমকে তাঁদের বরখাস্ত ও অপসারণের কথা জানানো হয়েছে। সংবাদকর্মীরা তাঁদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করছেন, কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে না জানার কারণে কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না। এটা তাঁদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আরেক প্রহশন।

জানতে চাইলে খুলনা বিশ্ববিদ্যলয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) খান গোলাম কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, কাউন্সিল শাখা সিন্ডিকেট সভার রেজল্যুশন ঠিক করতে দেরি করায় শিক্ষকদের চিঠি দিতে দেরি হয়েছে। তবে আজ চিঠিতে তিনি স্বাক্ষর করেছেন। রোববার হয়তো চিঠি হাতে পাবেন ওই শিক্ষক।