Thank you for trying Sticky AMP!!

গাজীপুরে পানিতে ডুবে দুই বছরে মৃত ৫৮

প্রতিদিন গাজীপুর জেলার কোথাও কোথাও পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে এবারের অতিবৃষ্টি বা বন্যার পানিতে ভরে উঠেছে নদী, নালা, খালবিল বা বাড়ির আশপাশে থাকা পুকুর, ডোবা বা জলাশয়। ফলে শিশু ও কিশোর–কিশোরীরা বেশি ঝুঁকিতে আছে।

দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সুমাইয়া (১৬) ছিল বড়। পরিবারের চোখের মণি। ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই বাড়ি থেকে নিখোঁজ সে। পরে সারা রাত এদিক-ওদিক খোঁজাখুঁজির পর পরের দিন সকালে তার লাশ পাওয়া গেল বাড়ির পাশে একটি বিলে, তা–ও ডুবন্ত অবস্থায়। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সালদই গ্রামে।
সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রাম। গত ২০ জুলাই দুপুরে বৃষ্টিতে খেলতে নেমেছিল ওই গ্রামের চার শিশু—ফরহাদ (৬), মিষ্টি (১০), তানিয়া (৯) ও ইব্রাহীম (৬)। বৃষ্টি শেষে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও তারা বাড়ি ফিরছিল না। আশপাশে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাদের হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে একটি ডোবায় মেলে চারজনের লাশ।
শুধু সুমাইয়া বা ওই চার শিশুই নয়, প্রায় প্রতিদিনই জেলার কোথাও কোথাও পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে এবারের অতিবৃষ্টি বা বন্যার পানিতে ভরে উঠেছে নদী, নালা, খালবিল বা বাড়ির আশপাশে থাকা পুকুর, ডোবা বা জলাশয়। ফলে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে হয়ে উঠেছে শিশু-কিশোর বা উঠতি বয়েসের ছেলেমেয়েদের চলাচল। অনেক সময় শখের বশে পানিতে গোসল করতে নেমে বা পানিতে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হচ্ছে অনেকে। পরে মিলছে তাদের লাশ।

সুমাইয়া মারা যায় বাড়ির আঙিনায় থাকা ‘মাদুলি বন’ নামের একটি বিলে পড়ে। তার চাচাতো বোন মোসাম্মত মাসুমা বলেন, গত ১০ বছরে বিলে কখনো এমন পানি হয়নি। সুমাইয়ার কিছুটা মানসিক সমস্যা থাকায় তাকে চোখে চোখে রাখত সবাই। এর মধ্যেই ওই সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে নিখোঁজ সে। পরে বিলে মেলে তার লাশ। ওই চার শিশুর ঘটনায় জয়দেবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল বলেন, ‘বৃষ্টির মধ্যে শিশুরা ডোবার পাশে খেলা করছিল, এটা এলাকাবাসী দেখেছেন। পরে ওই ডোবায় তাদের লাশ পাওয়া যায়।’

গত দুই বছরে ৭৬টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫৮ জন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ২৯টি দুর্ঘটনায় ২২ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৭টি দুর্ঘটনায় মারা যায় ৩৬ জন।

গাজীপুর জেলা ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত দুই বছরে ৭৬টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫৮ জন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ২৯টি দুর্ঘটনায় ২২ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৭টি দুর্ঘটনায় মারা যায় ৩৬ জন। এ বছর ২০২০ জানুয়ারি থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত মোট নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৭টি। এতে মারা গেছে ২৭ জন।

সাধারণত ডুবুরিরা কোনো বড় দুর্ঘটনা বা উদ্ধারকাজে অংশ নেন। বাইরে অনেকেই পুকুর, ডোবা বা পানিতে পড়ে মারা যায়, যাদের উদ্ধার করা হয় স্থানীয়ভাবে। এর মধ্যে কারও কারও খবর প্রকাশ পায় সংবাদমাধ্যমে। সেদিক বিবেচনায় গত তিন মাসের (জুন থেকে আগস্ট) পর্যন্ত দেশের আটটি শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও পত্রিকা ঘেঁটে দেখেন এই প্রতিবেদক। তাতে গাজীপুরে বিভিন্ন সময় পানিতে ডুবে ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এদের বয়স ৪ থেকে ১৯ বছর।

গাজীপুর জেলা ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত দুই বছরে ৭৬টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে পানিতে ডুবে মারা গেছে ৫৮ জন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ২৯টি দুর্ঘটনায় ২২ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৭টি দুর্ঘটনায় মারা যায় ৩৬ জন। এ বছর ২০২০ জানুয়ারি থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত মোট নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৭টি। এতে মারা গেছে ২৭ জন।  
সাধারণত ডুবুরিরা কোনো বড় দুর্ঘটনা বা উদ্ধারকাজে অংশ নেন। বাইরে অনেকেই পুকুর, ডোবা বা পানিতে পড়ে মারা যায়, যাদের উদ্ধার করা হয় স্থানীয়ভাবে। এর মধ্যে কারও কারও খবর প্রকাশ পায় সংবাদমাধ্যমে। সেদিক বিবেচনায় গত তিন মাসের (জুন থেকে আগস্ট) পর্যন্ত দেশের আটটি শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও পত্রিকা ঘেঁটে দেখেন এই প্রতিবেদক। তাতে গাজীপুরে বিভিন্ন সময় পানিতে ডুবে ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এদের বয়স ৪ থেকে ১৯ বছর।

এবার এমনিতেই বন্যা, তার ওপর স্কুল–কলেজ বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঝুঁকি বেশি। এ ব্যাপারে আমরা সব সময়ই অভিভাবকদের সচেতন করি। কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হয় না। প্রত্যেকের সাঁতার জানাটা জরুরি। ছোটবেলা থেকেই শিশুদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।
মো. সাইফুল ইসলাম, সদস্য, গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল

গবেষক বা পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজে নিয়োজিত কয়েকজন বলেন, মূলত পানিতে মারা যাওয়ার একটি বড় কারণ সাঁতার না জানা। সাঁতার না–জানা কেউ পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় কোনো ধরনের চিৎকার বা কারও সহযোগিতা চাইতে পারে না। এ কারণে নিমেষেই শেষ হয়ে যায় তাদের প্রাণ। এখানে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের একজন (ফায়ার ফাইটার অ্যান্ড ওয়াটার রেস্কিউয়ার) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এবার এমনিতেই বন্যা, তার ওপর স্কুল–কলেজ বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঝুঁকি বেশি। এ ব্যাপারে আমরা সব সময়ই অভিভাবকদের সচেতন করি। কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হয় না। প্রত্যেকের সাঁতার জানাটা জরুরি। ছোটবেলা থেকেই শিশুদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।’