Thank you for trying Sticky AMP!!

গ্রামে গ্রামে নতুন ধানের ঘ্রাণ

ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকেরা। গতকাল গৌরীপুরের ডৌহাখোলা এলাকায়। আনোয়ার হোসেন

সকালের কুয়াশা তখনো কাটেনি। ইতিমধ্যে ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে। কৃষকেরা চলে যাচ্ছেন ধান কাটার কাজে। আর বাড়ির নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আগের দিনের মাড়াই হওয়া ধান আর খড় শুকানোর কাজে। গতকাল শনিবার সকালে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নওপাড়া গ্রামে গিয়ে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।

নওপাড়া গ্রামের কৃষক তারা মিয়া জানান, সকাল থেকেই তিনি ধান কাটার কাজ শুরু করেন। কয়েক বছর ধরে কোনো গ্রামেই আর ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যায় না। নিজের জমির ধান এখন নিজেকেই কাটতে হয়। সময়মতো কাজ শেষ করার জন্য বাড়ির নারীরা এখন ধান মাড়াইয়ের কাজে সহযোগিতা করেন। অগ্রহায়ণ মাসে গ্রামজুড়ে চলে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। এ সময়টায় গ্রামের মানুষ খুব ব্যস্ত থাকলেও নতুন ধানের ঘ্রাণে তাঁদের মনে বেশ আনন্দ থাকে। কোনো কাজে ক্লান্তি আসে না।

গতকাল ময়মনসিংহ সদর, ঈশ্বরগঞ্জ ও গৌরীপুর উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সব গ্রামেই এখন নতুন ধানের উৎসব। কিষান–কিষানিরা ধান কাটা আর মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত। তাঁদের এখন দম ফেলার সুযোগ নেই।

প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসজুড়ে চলে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। কৃষকদের ঘরে তৈরি হয় নতুন ধানের পিঠা-পুলি। এক দিকে শীতের আগমন, অন্যদিনে নতুন ধানের ঘ্রাণে গ্রামগুলোতে চলে নবান্নের উৎসব।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জের শোলারি গ্রামের একটি মাঠে ধান কাটছিলেন চারজন কৃষক। তাঁদের মধ্যে ইসমত আলী নামের একজন কৃষক বলেন, ‘আমরা তো আর নবান্ন বুঝি না। তবে প্রতিবছর এ সময়টা আমাদের জন্য খুব আনন্দের হয়। নতুন ধান ঘরে ওঠে। আত্মীয়রা বেড়াতে আসে। ধান কাটার শেষে আমরাও বেড়াতে যাই আত্মীয়ের বাড়ি। নানা পদের পিঠা তৈরি হয়।’

পাশেই ধান কাটছিলেন কৃষক লিটন মিয়া। তিনি বলেন, ধান কাটার কাজ পুরোপুরি শেষ না হলে তাঁর বাড়িতে পিঠা তৈরি হয় না। এখন বাড়ির নারী-পুরুষ সবাই ধান কাটা আর মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত। পিঠা তৈরির সময় নেই।

বেলা একটা থেকে দুইটার মধ্যে গৌরীপুরের ডৌহাখলা, মরিচালি ও চুরালি এবং সদরের চরশ্রীরামপুর, রঘুনাথপুরসহ আরও কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠে সোনালি রঙের পাকা আমন ধানের খেত। কোনো কোনো খেতে কৃষক ধান কাটছেন। আবার কোনো কোনো খেতের ধান এখনো পুরোপুরি পাকেনি।

ডৌহাখলা বাজার এলাকায় কৃষক আবদুল বারী বলেন, সকালে কুয়াশা কাটার আগেই তিনি ধান কাটতে শুরু করেছেন। যতক্ষণ দিনের আলো থাকবে, ততক্ষণই তিনি ধান কাটবেন। কয়েক দিনের মধ্যে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শেষ করতে হবে। সামনে পৌষ মাস। পৌষ মাসে প্রচণ্ড শীত পড়ে। তার আগেই তিনি ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শেষ করতে চান। এ জন্য বাড়ির নারী ও শিশুরাও ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত।

গ্রামগুলো ঘুরে জানা যায়, আনন্দের মধ্যে কয়েক বছর ধরে একটা কষ্ট অনুভব করেন তাঁরা। দিনে দিনে ধানের দাম কমে যাওয়ায় তাঁদের এ কষ্ট। এ বছর আমনের দাম এখনো খুব বেশি না। জাতভেদে প্রতি মণ ধান ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।