Thank you for trying Sticky AMP!!

চট্টগ্রামে ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন বেশি, ফাঁকা কোভিড শয্যা

কোভিড-১৯

চট্টগ্রামে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। সঙ্গে বাড়ছে হাসপাতাল ও আইসোলেশন সেন্টার। কিন্তু বেশির ভাগ রোগী ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে নগরের হাসপাতালগুলোতে দিনে দিনে কমে আসছে কোভিড রোগীর ভিড়।

চিকিৎসকদের ভাষ্য, ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ রোগী হাসপাতাল বা আইসোলেশন সেন্টারে যাচ্ছেন না। যাঁদের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তাঁদের বেশির ভাগ দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ নিচ্ছেন। তাঁরা জানান, শ্বাসকষ্টের রোগীরা কেবল হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। এখন সে সংখ্যাও
কমে আসছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, প্রথম দিকে করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি ছিল। অনেকে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তেন। সেই ভীতি ধীরে ধীরে কাটছে। এতে মনোবলও মজবুত হচ্ছে। ফলে কারও উপসর্গ দেখা দিলে হাসপাতালমুখী হওয়ার প্রবণতা কমে আসছে। বরং ওই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠা আরেকজন থেকে দেখে শিখে নিচ্ছেন, মনোবল পাচ্ছেন। এসব কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে আসছে।

গতকাল সকাল ছয়টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে নতুন করে ২৯২ জন করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হন। এ নিয়ে সরকারি হিসাবে চট্টগ্রামে মোট শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ১৮০ জন। চট্টগ্রামে গতকাল ভোর পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১৯৫ জন। তাঁদের মধ্যে ১৩৮ জন চট্টগ্রাম নগরের। সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৫০ শতাংশের মতো।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ৪ থেকে ৫ শতাংশ জটিল রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা বেশি প্রয়োজন। এর বাইরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে আরও অনেকে আসছেন। তাঁদেরও দ্রুত অক্সিজেন দিতে পারলে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৬০টি শয্যা ফাঁকা ছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১০১ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হলুদ ও লাল জোনে ১৬০ জন চিকিৎসাধীন থাকার পর ৪০ শয্যা ফাঁকা থাকে। ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডি হাসপাতালে ৩০ শয্যার ছিল ২৫টি ফাঁকা। ফৌজদারহাট ৫০ শয্যার ফিল্ড হাসপাতালে গতকাল রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন মাত্র সাতজন। পতেঙ্গায় নতুন চালু হওয়া বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতালে ৬০ শয্যা আছে। সেখানে গতকাল সকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন ছয়জন। জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট-২ হিসেবে পরিচিত হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের ৫০ শয্যার ৪২টি এখন ফাঁকা। ৫০ শয্যার রেল হাসপাতালের ২০টি ফাঁকা।

>চিকিৎসকদের ভাষ্য, করোনা কিংবা উপসর্গ থাকা রোগীদের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ হাসপাতাল বা আইসোলেশন সেন্টারে যাচ্ছেন না।

চট্টগ্রামে রোগী শনাক্ত বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়। সবচেয়ে বড় আইসোলেশন সেন্টার চালু করেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডসংলগ্ন আইসোলেশন সেন্টারে শয্যাসংখ্যা ২৫০। গতকাল বিকেলে রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন মাত্র ২৪ জন। সেখান থেকে অবশ্য ২৩ জন সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে যান।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, কোভিড রোগী হাসপাতালে কম আসছেন। এলে ৮০ শতাংশ রোগী ওষুধ ছাড়া সুস্থ হচ্ছেন। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে ৪–৫ শতাংশ জটিল রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। এখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীও নগরের বাকলিয়ায় কোভিড রোগীদের জন্য ‘মুক্তি আইসোলেশন সেন্টার’ চালু করেন। ৭০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারে গতকাল দুপুরে কোভিড সাতজন ও উপসর্গ নিয়ে আসা পাঁচজন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন দুজন।

মুক্তি আইসোলেশন সেন্টারের সমন্বয়ক ইফতেখার কামাল খান প্রথম আলোকে বলেন, অনেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এ কারণে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম।

অক্সিজেন নিয়ে ব্যবসা

চট্টগ্রামের বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা চলছে। কিন্তু কোনো কোনো হাসপাতালে অক্সিজেনের অতিরিক্ত মূল্য নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যেমন নগরের মেহেদীবাগের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের রোগীকে এক দিন অক্সিজেন দেওয়া হয়। এ জন্য এক লাখ টাকার ওপরে বিল ধরিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ও অনলাইন পোর্টালে ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা হতে দেখা যায়।

বিষয়টি চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নাছির উদ্দীনের দৃষ্টিগোচর হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি হাসপাতালটির নাম উচ্চারণ করে প্রথম আলোকে বলেন, অক্সিজেনের জন্য লাখ টাকা বিল ধরিয়ে দেওয়া অমানবিক। রোগীর সঙ্গে এ ধরনের আচরণ দুঃখজনক। বিষয়টি ভিজিলেন্স দলের সদস্যরা খতিয়ে দেখবেন।

সিভিল সার্জন ফজলে রাব্বি জানান, এক সিলিন্ডার অক্সিজেন হাজার টাকার কম। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন এত বিল করেছে, সেটা তাদের বিষয়।