Thank you for trying Sticky AMP!!

চট্টগ্রাম কলেজের ভালোবাসার সাতাত্তর শিক্ষা

চট্টগ্রাম কলেজের ১৯৭৭ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নৌবিহারে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। ১৫ মার্চ কর্ণফুলীর মোহনায় প্রমোদতরি ওয়েস্টার্ন ক্রুজে। সংগৃহীত

আবুল হাসান। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন ১৯৭৭ সালে। এরপর জীবনচলার পথে বহু মাইলফলক পার করেছেন তিনি। ৪২ বছর পর আবার ফিরেছেন সেই স্মৃতির আঙিনায়। তবে শিক্ষার্থী নয়, কলেজ পরিচালনার ভার নিয়ে, অধ্যক্ষ হয়ে। এখন দিনভর নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁকে। কিন্তু মন থেকে ছাত্রজীবনের সেই কলেজটাকে যেন সরাতে পারেন না। জীবনের উত্থান পর্বের সেই স্মৃতিরা এখনো মনের উঠানে এসে ভিড় করে। কলেজজীবনের সেই দুই বছর যেন গেঁথে আছে হৃদয়ে।
শুধু হাসান নন, পরিণত বয়সে এসে অনেকেরই মন অতীতাকুল হয়ে ওঠে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা ভেবে। তাঁদের সবাই আজ জীবনের নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত মানুষ। জীবিকার প্রয়োজনে দেশ বিদেশের নানা প্রান্তে এত দিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন। কিন্তু কেউ যেন তারুণ্যের উচ্ছল দিনগুলোকে ভুলতে পারেননি। যত দূরেই থাকুক না কেন, এত দিন ধারণ করে রেখেছেন কলেজজীবনের সেই ভালোবাসার ৭৭ সালকে। আর ১৫ মার্চ শুক্রবার সেই ভালোবাসা আর সেই তারুণ্যের দিনগুলোকে যেন তাঁরা ফিরে পেয়েছিলেন। সেদিন বঙ্গোপসাগরের বুকে প্রমোদতরি ওয়েস্টার্ন ক্রুজে একঝাঁক পরিণত তরুণ ভেসে গিয়েছিলেন আড্ডায়, গানে আর তারুণ্যের উল্লাসে। কলেজজীবনের সহপাঠীদের পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন তাঁরা।
তারুণ্যকে ফিরে পাওয়ার এই সুন্দর আয়োজনের অন্যতম আয়োজক নৌ প্রকৌশলী এস এম এ হান্নান বললেন, ‘কর্মমুখর জীবনের একটা প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা। আমাদের অবসরের সময় এখন। এখন পেছনের দিনগুলো আমাদের টানছে। আমরা কেউ বার্ধক্যকবলিত হতে চাই না। তাই তারুণ্যের ডাকে আমাদের আয়োজন।’
হান্নানের সঙ্গে ছিলেন মাস্টার ম্যারিনার মাহফুজুল ইসলাম, ব্যাংকার সোহেল খান, জালাল উদ্দিন, আইনজীবী এ টি এম আফতাব উদ্দিন, কেএসআরএমের পরিচালক (বিপণন) এনামুল হক, ইস্টার্ন রিফাইনারির উপমহাব্যবস্থাপক জাহির উদ্দিন বাদল, প্ল্যান্টার্স ব্রোকার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল করিম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল হালিম, গায়ক শাহরিয়ার খালেদ, কবি কামরুল হাসান হারুন, ব্যবসায়ী ইকবাল হোসাইন, নীলুফার শিরিন চৌধুরী, চিকিৎসক আলমগীর চৌধুরী।
হান্নান জানান, তাঁদের সহপাঠী এসএ গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন আলম, সাদ মুসা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন, এলিট গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ, নিয়াজ আহমেদ চৌধুরী এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছেন।
বিদেশে থেকেও এ আয়োজনে প্রেরণা দিয়েছেন কাতারপ্রবাসী প্রকৌশলী, গীতিকার ও গায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী প্রকৌশলী ওয়াজিউল্লাহ লিটন, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আজম চৌধুরী, কানাডাপ্রবাসী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান।
ওয়েস্টার্ন ক্রুজের মিলনায়তনে সারা দিনের আড্ডার সূত্রপাত করেন মাস্টার ম্যারিনার মাহফুজুল ইসলাম। এস এম এ হান্নান ব্যাখ্যা করলেন ভালোবাসার ৭৭–এর পটভূমি। তাঁরা দুজন শুরুর বক্তৃতায় জানালেন কেন কীভাবে এই আয়োজন করলেন। এরপরই শুরু হয়ে গেল সহপাঠী শাহরিয়ার খালেদের আসর মাতানো গান। তিনি গেয়েছেন সত্তর আর আশির দশকের জনপ্রিয় গানগুলো। গান গেয়েছেন প্রিয়া চক্রবর্তী। আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয় ছিল র‍্যাফল ড্র। এতে উপস্থিত ২৮ জনকে নানা ধরনের পুরস্কার দেওয়া হয়।
সেদিনের সর্বশেষ আকর্ষণ ছিল পতেঙ্গা বোট ক্লাবে নৈশভোজ। এর আগে প্রমোদতরি ওয়েস্টার্ন ক্রুজ থেকে নামার মুহূর্তে সবাই একযোগে শাহরিয়ার খালেদের সঙ্গে গেয়ে উঠলেন মন মাতানো সেই গান—‘এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে’। এই গানটি ৭৭ ব্যাচের সহপাঠী আবদুল্লাহ আল মামুনের লেখা। বন্ধুর লেখা গানের তালে তালে নেচে নেচে সবাই দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখলেন বহুদিনের জন্য।