Thank you for trying Sticky AMP!!

চরাঞ্চলের মানুষ পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা

দৌলতপুরের বাচামারা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র তালাবদ্ধ। তবু চিকিৎসকের অপেক্ষায় নারী ও শিশুরা। তবে সেদিন কেন্দ্রটি খোলেনি। ১৮ মার্চ দুপুর ১২টায়। ছবি: প্রথম আলো

১১ মার্চ, বেলা ১১টা। উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে তালা ঝুলছে। স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা কয়েকজন নারী, পুরুষ ও শিশু দাঁড়িয়ে। এক ঘণ্টা অপেক্ষার পরও কেন্দ্রের তালা না খোলায় তাঁরা ফিরে যান। ১৮ মার্চও সেখানে একই চিত্র চোখে পড়ে। স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা ব্যক্তিরা চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবু কেন্দ্রটির তালা খোলার কেউ নেই। দুই ঘণ্টা অবস্থান করে সেখানে কোনো চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি।

এই পরিস্থিতি দেখা গেল মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চল বাচামারা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে। নিজস্ব কোনো অবকাঠামো নেই, বাচামারা বাজারে একটি পরিত্যক্ত ঘরে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটির কার্যক্রম কোনো রকমে চলছে। শুধু এই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, উপজেলার চরাঞ্চলের অন্যান্য উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোরও প্রায় একই দশা। কোনো কোনো ইউনিয়নে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই।

উপজেলা পরিবারকল্যাণ ও পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরকাটারী, বাচামারা, বাঘুটিয়া ও জিয়নপুর এই চারটি ইউনিয়ন নদীভাঙনকবলিত এলাকা। এর মধ্যে চরকাটারী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। দুর্গম চরে ইউনিয়নটির অধিকাংশ জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাচামারা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ছিল বাচামারা পুরাতন বাজার এলাকায়। ১৯৮৮ সালের বন্যায় বাচামারা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে বাচামারা বাজারে ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত একটি টিনের ঘরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির কার্যক্রম চলছে।

উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে একজন চিকিৎসক, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থাকার কথা। তবে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও ফার্মাসিস্ট ছাড়া বাকি দুটি পদ শূন্য। চরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকতে চান না। সম্প্রতি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চিকিৎসক নাঈম হাসান বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় এই পদটিও খালি আছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের বন্যায় বাঘুটিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক ও পাচুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ২০১৮ সালের বন্যায় পারুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক নদীগর্ভে চলে যায়। এরপর থেকে এসব সরকারি ক্লিনিক অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। নদীতে অধিকাংশ স্থান ভেঙে যাওয়ায় চরকাটারী ইউনিয়নে কোনো কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। তাই চরের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো অস্থায়ীভাবে বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালাচ্ছে।

এসব চরে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধও পাওয়া যায় না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। ১০ মার্চ জিয়নপুর ইউনিয়নের আমতলী কমিউনিটি ক্লিনিকে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় লাউতারা গ্রামের বৃদ্ধ শামসুল ইসলাম শিকদার প্যারাসিটামল নিতে এসেছেন। তবে ক্লিনিকটিতে ওষুধ না থাকায় তিনি খালি হাতে ফিরে যান।

ক্লিনিকটির কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার আবু নাঈম বলেন, এখানে ২৯ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। তবে এক দিন আগে প্যারাসিটামল শেষ হওয়ায় ওই বৃদ্ধকে দেওয়া যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮ মার্চ বাচামারা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ ছিল। সে সময় স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা কয়েকজন নারী দীর্ঘ সময় অপেক্ষা শেষে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে যান। জ্বর ও সর্দিজনিত সমস্যা নিয়ে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান বাচামারা হাজীপাড়া গ্রামের হালিমা আক্তার। তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় বাড়ি ফিরে যান। গ্যাস্ট্রিক ও পেটের ব্যথার কারণে বাচামারা কাছারিপাড়া গ্রামের রাবেয়া খাতুন ওষুধ নিতে এসে ফিরে যান।

উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সোনিয়া আক্তার দাবি করেন, পারিবারিক সমস্যার কারণে ওই দুই দিন (১১ ও ১৮ মার্চ) কর্মস্থলে যেতে পারেননি। ফার্মাসিস্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাবার অসুস্থতার কারণে ওই দুই দিন কর্মস্থলে যাননি।

উপজেলা পরিবারকল্যাণ ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাচামারা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। চরাঞ্চলের অন্যান্য উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়েও তিনি খোঁজখবর নেবেন।