Thank you for trying Sticky AMP!!

চলন্ত ট্রেনে প্রসব: নবজাতককে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন সেই মা

চলন্ত ট্রেনে সন্তান জন্ম দেওয়া নবীয়া বেগম (৩৪) বাড়ি ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ থেকে তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। নবীয়া ও তাঁর সন্তানকে বিনা ভাড়ায় বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স।

বিদায়ের সময় হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নবীয়া ও নবজাতক ইব্রাহীমকে একগুচ্ছ ফুল, ডালাভর্তি ফল, বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও নতুন জামাকাপড় উপহার দেন। পাশাপাশি কেউ কেউ নবীয়া এবং তাঁর নবজাতককে কম্বল এবং নগদ অর্থ সহযোগিতা করেন।

আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, নবীয়া বেগম এবং তাঁর নবজাতক পুরোপুরি সুস্থ। পরপর চারটি সন্তান জন্ম দেওয়া নবীয়া শারীরিকভাবে দুর্বল। তাঁকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। ট্রেন বা বাসে যাওয়াটা নবজাতক ও মায়ের জন্য নিরাপদ না হওয়ায় হাসপাতাল প্রশাসন তাঁদের লালমনিরহাটের কালিগঞ্জের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত নবীয়া ও তাঁর সন্তানের জন্য ৪০ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতা মিলেছে। যাওয়ার সময় নবীয়ার সঙ্গে ছিলেন স্বামী ছকমাল আলী ও বড় ছেলে ইসলাম।

আজ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নবীয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা এই মাত্র বাড়ি পৌঁছেছেন। তিনি ও নবজাতক সুস্থ।

নবজাতক ইব্রাহীমকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়লেন নবীয়া। অ্যাম্বুলেন্সে তাঁর পাশে বসা স্বামী ছকমাল আলী। বগুড়া, ২৮ নভেম্বর। ছবি: সোয়েল রানা

নবীয়া বেগম লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের দিনমজুর ছকমাল আলীর স্ত্রী। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বসতভিটা ছাড়া নবীয়ার স্বামীর অন্য কোনো সম্পদ নেই। কয়েক মাস আগে রাজমিস্ত্রির জোগালির (সহযোগী) কাজ করতে পরিবার নিয়ে ঢাকায় যান ছকমাল। এ সময় নবীয়া কাজ নেন পোশাক কারখানায়। তবে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় আর কাজে যাননি। এই দম্পতির আরও তিন ছেলে রয়েছে। ছকমালের ভাষ্য, সংসারে অভাবের কারণে তিনি স্ত্রীকে চিকিৎসক দেখাতে পারেননি। কবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে, সেটাও তাঁদের জানা ছিল না।

গত রোববার রাতে ঢাকা থেকে আন্তনগর ট্রেন লালমণি এক্সপ্রেসে করে লালমনিরহাটের কালিগঞ্জে যাচ্ছিলেন নবীয়া বেগম। স্বামী ছকমালের সঙ্গে তিনি রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। ট্রেনে ওঠার পরপরই প্রসবব্যথা ওঠে তাঁর। রাত আড়াইটার দিকে চলন্ত ট্রেনে পুত্রসন্তান জন্ম দেন তিনি। এ সময় ট্রেনে কোনো চিকিৎসক বা ধাত্রী ছিলেন না। প্রসবের পর নবীয়ার রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। পরে সোমবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে ট্রেনটি বগুড়া স্টেশনে পৌঁছালে যাত্রীরা তাঁকে এই স্টেশনে নামিয়ে দেন। এরপর স্টেশনে থাকা এক ব্যক্তি জাতীয় জরুরি কেন্দ্রের নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। জরুরি কেন্দ্র থেকে বিষয়টি বগুড়া ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে জানানো হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল রেলস্টেশন থেকে প্রসূতি ও নবজাতককে উদ্ধার করে সকাল সাড়ে আটটার দিকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

আরও পড়ুন:
 চলন্ত ট্রেনে সন্তান জন্ম, ৯৯৯–এ ফোন করার পর হাসপাতালে