Thank you for trying Sticky AMP!!

চার প্রকল্পের কোনোটির অস্তিত্বই নেই, কোথাও কাজই হয়নি

প্রকল্পের নাম খাজুরবাড়িয়া সুলতান সিকদার বাড়ি থেকে লোকমান সিকদার বাড়িমুখী রাস্তা পুনর্নির্মাণ। এ প্রকল্পের বরাদ্দ ছিল ৮ মেট্রিক টন চাল। তা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই নামে কোনো সড়ক নেই।
আরেকটি প্রকল্পের নাম জোনাব আলী মৃধা বাড়ি থেকে সাইড বেড়িমুখী রাস্তা পুনর্নির্মাণ। এখানে বরাদ্দ ৯ মেট্রিক টন চাল। এই বরাদ্দও তুলে নেওয়া হয়েছে। এই এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, ওই রাস্তায় গত ৭-৮ বছরে কোনো কাজ হয়নি।
এ ঘটনা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দাসপাড়া ইউনিয়নে। দুটি প্রকল্পেরই সভাপতি ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মী মো. আতিকুর রহমান। তিনি আরও একটি প্রকল্পের সভাপতি। অবশ্য সেটিতে দায়সারা হলেও কিছু কাজ করেছেন। তাঁর চাচা মামুন মৃধা আরেকটি প্রকল্পের সভাপতি। তিনিও নামমাত্র কাজ করেই বরাদ্দ তুলে নিয়েছেন।
আতিকুরের মা মোসা. নিলুফা বেগম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি। মামুন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওই চারটি কাজ করা হয়। এসব কাজ তদারকের দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)।

এ বিষয়ে পিআইও রাজিব বিশ্বাস বলেন, ‘কাজ না করে বরাদ্দ চাল কিংবা গম আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই। কাজ করার পরই চাল কিংবা গম ছাড় করা হয়। তবে মামলার বিষয়ে তিনি জানেন না।
ওই চার প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দাসপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ এন এম জাহাঙ্গীর হোসেন মামলা করেছেন। ১২ নভেম্বর পটুয়াখালীর সিনিয়র স্পেশাল জজের আদালতে তিনি মামলাটি করেন। এতে পিআইও, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের আসামি করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া নামে প্রকল্প এবং একাধিক প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে বরাদ্দ করা চাল ও গম আত্মসাৎ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউপি সদস্যরা রেজল্যুশন করে তাঁকে এ বিষয়ে মামলা করার অনুরোধ করেন। এরপর তিনি মামলা করেন।
অনিয়মের বিষয়ে আতিকুর রহমান বলেন, কোনো ভুয়া প্রকল্প নেই। সড়কের কাজ ঠিকভাবেই করেই গম ও চাল তুলেছেন তিনি। উল্টো তিনি বরাদ্দের চেয়েও বেশি কাজ করেছেন।
সম্প্রতি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের খাজুরবাড়িয়া সুলতান সিকদার বাড়ি থেকে লোকমান সিকদার বাড়িমুখী রাস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের খোঁজে গিয়ে দেখা যায়, এই নামে কোনো সড়ক নেই।

এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হানিফ সিকদার ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য সালমা মরিয়ম বলেন, এই ওয়ার্ডে সুলতান সিকদার ও লোকমান সিকদার নামে কেউ নেই। ওই নামে সড়কও নেই। এটি ভুয়া প্রকল্প।

৩ নম্বর ওয়ার্ডের জোনাব আলী মৃধার বাড়ি থেকে সাইড বেড়িমুখী রাস্তাটির অস্তিত্ব আছে। সম্প্রতি লুৎফর রহমান মৃধা নামের এক ব্যক্তি ওই সড়কের পাশের খেতে কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, গত সাত-আট বছরে এই সড়কে কোনো কাজ হয়নি। একই কথা বলেন মো. ইয়াছিন নামের এক ব্যক্তি।
একই ওয়ার্ডের আরেকটি প্রকল্পের নাম কাজী বাড়ি থেকে আনছার খলিফার বাড়িমুখী রাস্তা পুনর্নির্মাণ। এখানে বরাদ্দ ১৫ মেট্রিক টন গম। প্রকল্প এলাকার কয়েকজন বলেন, এ সড়কটিতে নামমাত্র কাজ হয়েছে।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের আরেকটি প্রকল্পের নাম বলরাম ধূপীর বাড়ি থেকে আসমত আলী মুন্সির বাড়িমুখী রাস্তা পুনর্নির্মাণ। এখানে বরাদ্দ ১৫ মেট্রিক টন গম। এ প্রকল্পের সভাপতি মামুন মৃধা। এ এলাকার কয়েকজন বলেন, এখানকার বরাদ্দের সিংহভাগ আত্মসাৎ করা হয়েছে। কাজ হয়েছে দায়সারা।
এই প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলার জন্য গত বুধবার মামুনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘কিসের কাজ? কোন কাজ?’ প্রকল্পের নামসহ বিস্তারিত জানালে তিনি বলেন, ‘একটু পরে ফোন দিচ্ছি।’এরপর আর তিনি ফোন দেননি। কল করা হলে ধরেনওনি। বরং একটু পর আতিকুর কল করে বলেন, সব কাজই ঠিকভাবে হয়েছে।
বিভিন্ন প্রকল্পের কয়েকজন সদস্য বলেন, তাঁদের স্বাক্ষর জাল করে প্রকল্পের বরাদ্দ তুলে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা কাজ সম্পর্কে জানেন না।