Thank you for trying Sticky AMP!!

চার মাস ধরে নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছেন একাই

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাবে কাজ করছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আসলাম মিয়া। ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আসলাম মিয়া গত সাড়ে চার মাসে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ৫৩৬টি নমুনা সংগ্রহ করেছেন। হাসপাতালের ল্যাবে অন্য কোনো স্বাস্থ্যকর্মী না থাকায় তাঁকে একাই কাজগুলো করতে হয়েছে। এ কাজগুলো করতে গিয়ে পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন আসলাম মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর যেকোনো সময় অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, জেলা হাসপাতালের ল্যাবে এমনিতেই অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগে রোগীর অনেক চাপ থাকে। তার ওপর করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ড ও আউটডোরে আসা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করা একা এক ব্যক্তির পক্ষে অসম্ভব কাজ। সেই অসম্ভব কাজটিই হাসি মুখে করে যাচ্ছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আসলাম মিয়া।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাবে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (ল্যাব) চারটি পদ রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ওই ল্যাবে একাই কাজ করছেন আসলাম মিয়া। গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আদেশে মো. রনি হোসেন ও মো. জাহাঙ্গীর আলম শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে যোগদান করেন। এর দুই দিন পর ২ জুলাই ওই দুই ব্যক্তি প্রেষণে নরসিংদী কোভিড–১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে বদলি হয়ে যান।

হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে রক্ত, মলমূত্র ও ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিদের পরীক্ষাসহ ২০ প্রকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। গত মার্চ থেকে ওই ল্যাবের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আসলাম মিয়ার ওপর সন্দেহভাজন কোভিড–১৯ রোগীদের নমুনা সংগ্রহের বাড়তি দায়িত্ব পড়েছে। টানা সাড়ে ৪ মাসে তিনি ৫৩৬ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

আসলাম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ৩১ মার্চ আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে এক ব্যক্তি মারা যান। তখন শরীয়তপুরে কোনো হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করার ব্যবস্থা ছিল না। পাশের জেলা থেকে তা সংগ্রহ করা হয়। রাত ১২টায় একা আমার ওপর দায়িত্ব পড়ে ওয়ার্ডের ভেতর ওই মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করার। জীবনে ওটি ছিল এক ভিন্ন ধরনের আতঙ্কের অভিজ্ঞতা। পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে রাতে বাসা থেকে বের হয়েছি। ছেলেমেয়ে টের পেয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে সাহস জুগিয়েছে। এরপর একাই সাড়ে চার মাস ছুটে চলছি। দিনরাত নমুনা সংগ্রহ করে চলেছি। শারীরিক ও মানসিকভাবে এখন কিছুটা ক্লান্ত বোধ করছি। এই ল্যাবে যদি কর্মী পদায়ন না করে তাহলে রোগীদের স্বাভাবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হবে। আমি যেকোনো সময় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারি।’

আসলাম মিয়াকে সহায়তা করার জন্য হাসপাতালের এমএলএসএস মো. মোতালেবকে প্যাথলজি ল্যাবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মো. মোতালেব মিয়া বলেন, একজন টেকনোলজিস্টকে দিয়ে এত নমুনা সংগ্রহ করা ও হাসপাতালের বিভিন্ন রোগীর ২০ প্রকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো অমানবিক। প্রতিটি নমুনা সংগ্রহের পর তাঁকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তা পরিষ্কার করতে হয়, সংরক্ষণ করতে হয়, ঢাকায় পাঠানোর কাজ করতে হয়, যা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ। একটু এদিক–ওদিক হলেই বিপদ।

জানতে চাইলে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মুনীর আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিয়ে একটি হাসপাতাল কীভাবে চলে? এ কথাটা আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বোঝাতে পারি না। বারবার চিঠি দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। নতুন নিয়োগে দুজনের পদায়ন হলো, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে তাঁদের আবার ডেপুটিশনে ছেড়ে দিতে হলো। আসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে আমার প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ হয়ে যাবে।’