Thank you for trying Sticky AMP!!

চাল না দেওয়া চালকলের জামানত জব্দ, দেওয়ারা পাবে প্রণোদনা

প্রতীকী ছবি

চুক্তি করেও বোরো মৌসুমে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করেনি কুষ্টিয়া জেলার ২৬১টি চালকল। এ কারণে এই চালকলগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করতে যাচ্ছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।  
এসব মিলের জামানত বাজেয়াপ্ত, প্রণোদনা বাতিল ও আগামী দুই মৌসুম চাল সরবরাহ থেকে চুক্তির বাইরে রাখার মতো পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।

কুষ্টিয়া জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। নির্ধারিত সময়ের পর আরও সময় বাড়িয়ে সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন কম। যেসব চালকল চাল দিয়েছে তাদের বাড়তি নানা সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করছে সরকার। এসব চালকলকে প্রণোদনা দেওয়া, আগামী মৌসুমে চালের দর বাড়ানো এবং এই চালকলগুলো যেন বেশি বরাদ্দ যাতে পায় সে বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।  

বোরো চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছিল ২৬ এপ্রিল। শেষ সময় ছিল ৩১ আগস্ট। এরপরও আরও ১৫ দিন বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত কেজি প্রতি চালের দাম ছিল ৩৬ টাকা।

চালকল মালিকেরা জানান,বোরো মৌসুমে ধানের দাম বেড়ে যাওয়া, চাল উৎপাদন খরচসহ অন্যান্য হিসেব মিলিয়ে সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় মিল মালিকদের খরচ বেশি পড়ছিল। এ কারণে অনেক মিল মালিক চাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর যারা চাল সরবরাহ করেছে তারাও লোকসান গুনেছেন। তবে চুক্তির প্রথম দিকে যারা চাল সরবরাহ করেছে তাদের তেমন লোকসান হয়নি। পরে যারা চাল দিয়েছেন তাদের লোকসান হয়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকারও বেশি। আর ছোট চালকল মালিক তারা এমনিতেই লোকসানে আছে। এ কারণে তারা চাল দিতে পারেনি।

জেলায় অটো ও হাসকিংসহ চালকল রয়েছে ৫৩৫টি। এদের মধ্যে ২৫৮টি হাসকিং (ম্যানুল) ও ৩টি অটো রাইস মিল চাল সরবরাহ করেনি। ১২টি মিল আংশিক সরবরাহ করেছে। ২৬৫টি চালকল পুরো চাল সরবরাহ করেছে। শহরের বড় বাজার গুদামের ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, তাদের গুদামে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। তার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৯ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর দেশে প্রচুর ধান উৎপাদনের পরেও ধানের বাজার বেড়ে যায়। আর বোরো মৌসুমে মোটা ধানের উৎপাদন হয় একেবারেই কম। এ কারণে ধান কিনে চাল তৈরি করতে সরকার নির্ধারিত দামের বেশি পড়ে যায়। তারপরও অনেকে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা লোকসান দিয়েও চাল সরবরাহ করেছে। তবে যারা চুক্তি করে চাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তাদের লোকসানের বিষয়টা দেখা উচিত। এই মিলমালিক নেতার দাবি, ছোট মিলাররা এমনিতেই দেউলিয়া হয়ে গেছে, তার ওপর কড়া পদক্ষেপ নিলে তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না।

চাল দিতে পারেনি এমন মিল মালিকদের তালিকা প্রস্তুত করেছে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। মিল মালিকদের ২ লাখ টাকা জামানত বাতিল এবং আগামী দুই মৌসুম চাল দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। আরও কঠিন কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে খাদ্য বিভাগ।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিকদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন,বোরো মৌসুমে যারা লোকসানে চাল দিয়েছে তাদের ভবিষ্যতে বাড়তি সুবিধা দিতে হবে। কারণ যারা লাভের সময় চাল দেবে আর লোকসানের সময় দেবে না তাদের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেবে তা সরকারের বিষয়। তবে যারা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে লোকসান হলেও চাল দিয়েছে তাদের বিষয়টি ভালো ভাবে দেখা দরকার।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাহসিনুল হক বলেন, যারা চুক্তি করেও চাল দেয়নি তাদের তালিকা করা হয়েছে। কি কারণে চাল দিতে পারেনি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিধি মোতাবেক এসব মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি ভাবছে। পাশাপাশি যারা লোকসানে চাল দিয়েছে তাদের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে মন্ত্রণালয়।