Thank you for trying Sticky AMP!!

চিকিৎসক-সংকটে বন্ধ সিসিইউ

চিকিৎসক–সংকটে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) বন্ধ হয়ে গেছে। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ৬৪ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি পদই শূন্য। হাসপাতালের অস্থায়ীভাবে একটি প্রকল্পের আওতায় নিয়োগ পাওয়া ২৮ জন চিকিৎসক হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন। এতে হৃদ্‌রোগ চিকিৎসাসহ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
গত শনিবার বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে রোগীদের হইচই, কান্নাকাটি। চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা অতিষ্ঠ। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ওই দিন ভর্তি ছিল ৫৬০ জন রোগী। রোগীদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। শয্যা খালি না থাকায় ৩০০ রোগীকে হাসপাতালের মেঝেতে, হাঁটাচলার রাস্তা ও করিডরে ফেলে রাখা হয়েছে।
রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন থেকে হাসপাতালে অসুস্থ্য স্ত্রীকে নিয়ে আসেন কৃষক ছৈয়দ আলম। চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এ হাসপাতালে কোনো চিকিৎসাসেবা নেই। এ রকম অবহেলা কোথাও দেখিনি।’

বন্ধ সিসিইউ
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ আছে হাসপাতালের জনগুরুত্বপূর্ণ ‘করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)।’ এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। কারণ হৃদ্‌রোগে আক্রান্তদের দ্রুত ও আধুনিক চিকিৎসার অন্য কোনো ব্যবস্থা জেলায় নেই।
হাসপাতালের চতুর্থ তলার এ সেবাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ১০ সিটের সিসিইউতে যন্ত্রপাতি চালু থাকলেও চিকিৎসক নেই। তাই রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। একজন নার্স বললেন, বিদেশি সহায়তায় এতো দিন চিকিৎসক-নার্সরা কেন্দ্রে কাজ করেছেন। সহায়তা বন্ধ থাকায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউনিটটি বন্ধ আছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সৌদি সরকারের আর্থিক সহায়তায় এ হাসপাতালে ২০১৮ সালের ২৭ মেপ্টেম্বর ১০ বেডের সিসিইউ কার্ক্রম চালু করা হয়। এর উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। কিন্তু উদ্বোধনের ছয় মাসের মাথায় গুরুত্বপুর্ণ ইউনিটটি বন্ধ হওয়ায় হতাশ মানুষ।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঢল নামার সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে জেলার সরকারি এ হাসপাতালে। রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবার জন্য আলাদা করে ওয়ার্ড চালু করতে হয়। ছয় মাস আগে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এ হাসপাতালের সামগ্রিক চিকিৎসা কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য ৮৬ জন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২৮ জন চিকিৎসক, অন্যরা সিনিয়র নার্স, স্টাফ নার্স ও কর্মকর্তা–কর্মচারী।
অন্যদিকে সদর হাসপাতালে জবনলের পদ রয়েছে ২৮৬ জনের। এর মধ্যে ৬০টি পদ শূন্য। শূন্যপদে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বেশি। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ৮৬ জন লোকবল যোগ দেওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম ভালোভাবে চলছিল। কিন্তু গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নিয়োগকৃত চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা এ হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ফলে চিকিৎসা কার্যক্রমে ধস নামে। এই পরিস্থিতি কখন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে—তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) বিধান পাল বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নিয়োগকৃত জনবল হঠাৎ একযোগে চলে যাওয়ায় সেবা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। জনবল চলে গেলেও রোগীর সংখ্যা কমছে না। বরং এখন গরম বেড়ে যাওয়ায় রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। জনবল–সংকটের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।
বিধান পালন বলেন, সিসিইউ চালু থাকা অবস্থায় অনেক জটিল রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। সিসিইউ বন্ধ থাকায় হৃদ্‌রোগের জটিল রোগীদেরও সাধারণ ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।