Thank you for trying Sticky AMP!!

চিটা ও শ্রমিক-সংকটে চাষিরা

নেত্রকোনায় বোরো ধান কাটার ধুম চলছে। কিন্তু এই ধান নিয়ে কৃষকেরা চিন্তিত। কারণ, একদিকে ধানের ফলন ভালো হয়নি, অর্ধেক খেতের ধানেই চিটা। অপর দিকে শ্রমিকের সংকট থাকায় বেশি টাকায় ধান কাটতে হচ্ছে। পাশাপাশি ধানের ন্যায্যমূল্যও পাচ্ছেন না তাঁরা। সরকারিভাবে এখনো জেলায় ধান সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সুরাইয়া খাতুন জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে জেলায় ৫ হাজার ৩৮৩ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে কেনা হবে। এ ছাড়া ৩৯ হাজার মেট্রিক টন চাল সরাসরি নিবন্ধিত মিলমালিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। প্রতি কেজি ধানের দাম হবে ২৬ টাকা ও চাল ৩৬ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর জেলায় বোরো আবাদ করা হয় ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। সেই হিসাবে জেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ১১ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন। সাধারণত হাইব্রিড, উফশী (উচ্চফলনশীল) ও দেশি—এই তিন জাতের বোরো আবাদ করা হয়। এর মধ্যে অন্তত ৮৫ শতাংশ জমিতে উফশী আবাদ করা হয়। সম্প্রতি মাঠে প্রায় সব ধানই পেকে যাওয়ায় ফসল কাটার ধুম লেগেছে। কিন্তু হাইব্রিড ব্রি আর ২৮, বিআর ২৯–সহ বিভিন্ন জাতের ধানে অর্ধেকের বেশি চিটা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

কৃষকেরা বলছেন, যে জমিতে প্রতি কাঠায় (১০ শতকে ১ কাঠা) ৭ থেকে ৮ মণ করে ধান হওয়ায় কথা, তাতে এখন ৩ থেকে ৪ মণ করে ধান হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) নেত্রকোনা কার্যালয় থেকে প্যাকেট করা বীজ নিয়ে তাঁরা ধান আবাদ করেন। তাঁদের ধারণা, বীজেই এ সমস্যা। তবে বিএডিসি নেত্রকোনা বীজ বিপণনকেন্দ্রের উপপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমাদের বীজ সম্পূর্ণ নীরোগ ও নির্ভেজাল। তাতে কোনো সমস্যা নেই। এটা গাজীপুরের ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে বিজ্ঞানীরা এসে পরীক্ষা করে দেখেছেন। চিটা কোল্ড ইনজুরি থেকে হয়েছে। যেসব কৃষক জানুয়ারি মাসের আগে ধানের চারা বপন করেছেন, তাঁরাই এ সমস্যায় পড়েছেন। তখন তাপমাত্রা রাতের বেলায় ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল। অথচ তাপমাত্রা ১৬ থেকে ২৫ ডিগ্রির নিচে হলেই ধানে চিটা হয়।’

ধান কাটার শ্রমিকের সংকটও ভোগাচ্ছে কৃষকদের। পর্যাপ্ত শ্রমিক না পাওয়ায় বেশি টাকা খরচ করে ধান কাটতে হচ্ছে।

জেলার ১০ উপজেলার মধ্যে খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ, মদন ও কলমাকান্দার আংশিক অংশ মূলত হাওরাঞ্চল। সবমিলে এখানে ছোট-বড় ১৩৪টি হাওর আছে। এই হাওরাঞ্চলে বোরো আবাদ করা হয় প্রায় ৫১ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে খালিয়াজুরিতে ৮৯টি হাওরে আবাদ হয় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বোরো ফসল। বোরোই এখানকার একমাত্র ফসল। এর ওপরই নির্ভর করে কৃষকদের সারা বছরের সংসার খরচ, চিকিৎসা, আচার-অনুষ্ঠান ও সন্তানদের পড়াশোনা।

খালিয়াজুরির বল্লভপুর গ্রামের হেলাল মিয়া, হরিদাস সরকার, রামধন সরকারসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, ধানের দাম নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। স্থানীয়ভাবে প্রতি মণ ধান মাত্র ৫০০ থেকে ৫১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের বীজ সংগ্রহ থেকে শুরু করে জমি চাষ, রোপণ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ, ধান কাটা ও শুকাতে যে খরচ হয়েছে, তাতে এই দামে পোষাচ্ছে না।

গত শুক্রবার কলমাকান্দা উপজেলার মেনকি বিলে গিয়ে দেখা যায়, খেতের সব ধানই পেকে বাতাসে দোল খাচ্ছে। পর্যাপ্ত শ্রমিক না পাওয়ায় অনেক কৃষক নিজেই ধান কাটছেন। কিষানিরা খলায় (মাঠে) ধান সেদ্ধ করে শুকাচ্ছেন। ছোট ছেলেমেয়েরাও তাদের সাহায্য করছে। বড়খাপন গ্রামের কৃষক জুয়েল জোয়ারদার বলেন, এবার শ্রমিক–সংকট। একজন শ্রমিককে দিনে ৭০০ টাকা দিতে হয়। প্রখর রোদ থাকলে আরও এক-দুই শ টাকা বেশি লাগে। তা–ও সময়মতো শ্রমিক মেলে না। একজন শ্রমিক দিনে এক কাঠা (১০ শতক) জমির ধান কাটতে পারেন। দ্রুত ধান না কাটতে পারলে যেকোনো সময় দুর্যোগের মুখে পড়তে হবে।

ঘনিচা গ্রামের কৃষক তারা মিয়া তালুকদার এ বছর সাড়ে চার হাজার শতকের ওপরে জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, ১০ শতক জমিতে ধান আবাদ ও কাটা নিয়ে ২ হাজার ৩০০ টাকার মতো খরচ হয়। আর ধান উৎপাদিত হয় চার মণ। বর্তমানে ৫১৫ টাকা বাজারদরে ধান বিক্রি করলে কিছুই থাকে না। তিনিও সরকারিভাবে ধান কেনার দাবি জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, তাঁদের কাছে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চিটা হওয়ার তথ্য রয়েছে। এতে ফলন কিছুটা কমে গেছে। এটি কোল্ড ইনজুরি থেকে হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনলে কৃষকের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে যাবে।