Thank you for trying Sticky AMP!!

চুয়াডাঙ্গার শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎবিভ্রাট, অতিষ্ঠ মানুষ

ভ্যাপসা গরমের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুতের অব্যাহত কম ভোল্টেজ ও লোডশেডিংয়ের কারণে জেলার শহরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আবাসিকের পাশাপাশি শিল্প, বাণিজ্যিক ও স্বাস্থ্যসেবা খাতও বিঘ্নিত হচ্ছে এ কারণে।

চুয়াডাঙ্গা পৌরশহর ও জেলার অন্য অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)। এ প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসংখ্যা ৩৩ হাজার।

ওজোপাডিকোর চুয়াডাঙ্গার বিক্রয় ও বিতরণকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন এসব দুর্ভোগের কথা স্বীকার করলেও কবে নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হবে, তা জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) থেকে প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিদ্যুৎ বিতরণ নির্ভরশীল।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত করার দিন (৪ মে) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরদিন ৫ মে তা এক লাফে ৯ ডিগ্রি বেড়ে ৩৫ ডিগ্রিতে পৌঁছে যায়। ৮ মে রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৫ থেকে ১৪ মে জেলার গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ওজোপাডিকো চুয়াডাঙ্গার বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ওজোপাডিকোর আবাসিক গ্রাহকই ২৭ হাজার ৯৩১। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ৪ হাজার ৪১৭, সেচ ১৫৫, শিল্পকলকারখানা ৩২, ক্ষুদ্রশিল্প ৪৩২, মসজিদ-মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৫৬ এবং অন্যান্য ৭২।

বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে আবাসিক গ্রাহকদের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম একের পর এক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা পৌরশহরের কোর্টপাড়ার বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, কম ভোল্টেজের কারণে তাঁর বাসার ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক পাখা এবং বৈদ্যুতিক বাল্বও নষ্ট হয়েছে গত কয়েক দিনে।

মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ রহিমা খাতুনের বললেন, কম ভোল্টেজের কারণে বৈদ্যুতিক পাখা কোনো রকমে ঘুরছে। কিন্তু এই গরমে এ হাওয়ায় তিষ্ঠানো যায় না।

বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের এমআরআই, এক্স-রে যন্ত্রসহ নানা যন্ত্র ব্যবহার করার যাচ্ছে না। অনেক পরীক্ষা–নিরীক্ষা সম্ভব না হওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগ বাড়ছে।

সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের পরামর্শক ওয়ালিউর রহমান বলেন, ১৫ দিন ধরে কম ভোল্টেজের কারণে অপারেশন থিয়েটারের এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র) চালু করা যাচ্ছে না। তীব্র ও ভ্যাপসা গরমের ভেতরে অপারেশন করতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসক ও নার্সদের পাশাপাশি রোগীর অবস্থাও কাহিল হয়ে পড়ছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কম ভোল্টেজ চরম আকার ধারণ করেছে।

নিউ জনতা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক নাহিদ হাসান বলেন, এক্স-রে মেশিন কোনোভাবেই চালু করা যাচ্ছে না।

ব্যবসা–বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে।

লৌহজাত আসবাব প্রস্তুতকারক মেসার্স মিজান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপক মো. তারিকুজ্জামান বলছিলেন, চাহিদা অনুযায়ী ভোল্টেজ না পাওয়ায় কারখানায় উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

সেলিম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী সেলিম উদ্দিন জানান, লেদ মেশিন চালু করা যাচ্ছে না।

শহরের মাছের আড়তদার অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস অভিযোগ করেন, কম ভোল্টেজের কারণে ফ্রিজ চালু করতে না পারায় মাছ সংরক্ষণ অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

ওজোপাডিকো চুয়াডাঙ্গার বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন প্রথম আলোকে জানান, চুয়াডাঙ্গার জাফরপুরে অবস্থিত পিজিসিবির গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে তা গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করে থাকেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ পাওয়ায় কম ভোল্টেজের সমস্যা হচ্ছে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভোল্ট নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

পিজিসিবির উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হাসান জোয়ারদার কম ভোল্টেজের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিভিন্ন পাওয়ার হাউস বা উৎপাদনকেন্দ্র ফল্টের কারণে বন্ধ আছে। গ্রিড থেকে ১৩২ কেভি ভোল্ট পাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ৯৯ থেকে ১০০, কখনো কখনো ১০৫ থেকে ১১০ পাওয়া যাচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী ভোল্ট না পাওয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।