Thank you for trying Sticky AMP!!

ছাদবাগানে উদ্যানের শোভা

ছাদবাগানে গাছের পরিচর্যা করছেন আবদুল্লাহ আল হারুন। দেড়শ প্রজাতির গাছ আছে এ ছাদবাগানে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের আনোয়ারার চাতরী গ্রামে। প্রথম আলো

বট,পাকুড়, হিজল, কেওড়া, কালোজাম, খেজুর, কমলা, লিচু, কামরাঙাসহ দেড় শ প্রজাতির গাছ নিয়ে ছাদবাগান। টবে লাগানো বৃক্ষের বনসাইয়ের পাশে ফুটে আছে দেশি-বিদেশি ফুল। লেবু, সফেদা ও পেয়ারা গাছে ঝুলছে ফল। এটি আট-দশটা ছাদবাগানের চেয়ে কিছুটা যেন আলাদা। চট্টগ্রামের আনোয়ারার আবদুল্লাহ আল হারুনের ছাদবাগানকে ছোটখাটো উদ্যানই বলা যায়।

আনোয়ারার ভূমি কার্যালয়ের উপসহকারী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল হারুন উপজেলার চাতরী গ্রামের নিজ বাড়িতে থাকেন। বাড়ির দুতলা ভবনের প্রায় এক হাজার বর্গফুট ছাদের ওপর তাঁর বাগান। প্রথম সন্তান জন্মের বছর ২০১০ সাল থেকে বাগান শুরু করেন তিনি।  

জানা গেল, পুরোনো ভবন বা ভবনের দেয়ালে অযত্নে বেড়ে ওঠা বট, পাকুড়, অশ্বত্থ, যজ্ঞ ডুমুর দেখলেই তুলে এনে টবে লাগান হারুন। সড়ক বিভাজকে জন্মানো অর্জুন, মেহগনি আর জারুলের বীজ পেলেই নিয়ে আসেন। নদীর পাড় থেকে সংগ্রহ করেন হিজল আর কেওড়াগাছ। পাশাপাশি নার্সারি থেকে অশোক, তমাল, পলাশ, বকুল, কালোজামসহ বিভিন্ন গাছের চারাও সংগ্রহ করেন। এভাবে প্রায় ৫০ প্রজাতির প্রাক বনসাই ও বনসাই তৈরি করেছেন তিনি। বড় বৃক্ষের ছোট সংস্করণ তার ছাদবাগানকে দিয়েছে ভিন্ন চেহারা। বনসাই ছাড়াও ফুল-ফল আর ঔষধি মিলিয়ে ১০০ প্রজাতির বেশি গাছ রয়েছে হারুনের ছাদবাগানে। ফলের মধ্যে আছে বিভিন্ন জাতের আম, কমলা, লিচু, কামরাঙা, বৈঁচি, বিভিন্ন জাতের লেবু, জাম্বুরা, মোসাম্বি, শরিফা, জামরুল, আনার, মিষ্টি জলপাই, মালবেরি, লাল আঙুর, সফেদা ইত্যাদি।

মুক্তিযোদ্ধা বাবার এ সন্তান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় সম্মানসহ স্নাতকোত্তর করেছেন। প্রতিদিন সকালে কাজে যাওয়ার আগে ২-৩ ঘণ্টা আর চাকরি শেষ করে বাড়িতে ফিরে আরও কয়েক ঘণ্টা বাগানের পরিচর্যায় ব্যয় করেন। অনেক সময় রাতের বেলা টর্চলাইটের আলোতেও বাগানে কাজ করেন তিনি।

কী করে ছাদবাগানের নেশা তৈরি হলো জানতে চাইলে হারুন বলেন, বিয়ের পর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হলে তাঁর মাথায় প্রথম এই চিন্তা আসে। অনাগত সন্তান একদিন বাগান থেকে নিজ হাতে ফল ছিঁড়ে খাবে এমন স্বপ্ন দেখতে থাকেন তিনি। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর সন্তানের জন্ম। নবজাতককে হাসপাতাল থেকে নিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে গাড়ি থামিয়ে টব আর গাছের চারা কেনেন তিনি। সেই টবেই লাগান নানা গাছের চারা। এভাবেই শুরু তাঁর ছাদবাগানের।

আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, বাগান নিয়ে তাঁর নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না। যখন যেখানে যে গাছ পেয়েছেন এনে লাগিয়েছেন বাগানে। সেটা ফুল, ফল কিংবা ঔষধি গাছ যাই হোক। তার মধ্যে অনেক গাছই শহরে তো বটেই, গ্রামেও আজকাল খুব দেখা যায় না। এসবের মধ্যে অন্যতম হিজল, তমাল, অশোক, পলাশ ও বকুল।

তাঁর ছাদবাগানের অন্যতম আকর্ষণ বৃক্ষের ছোট সংস্করণ বনসাই। কী করে বনসাই তৈরির চিন্তা মাথায় এল জানতে চাইলে হারুন বলেন, ‘একবার পত্রিকায় পড়েছিলাম, একটি বাঁশঝাড়ের বনসাইয়ের দাম লাখ টাকার ওপরে। জেনে খুবই অবাক হয়েছিলাম। তখন থেকেই বনসাইয়ের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়। বাগান শুরু পর তাই চীনা বট আর পাকুড়ের চারা নিয়ে টবে লাগাই। কিন্তু কীভাবে বনসাই তৈরি করতে হয় জানতাম না। পরে ইউটিউব দেখে শিখেছি বিষয়টা।’

হারুন আরও বলেন, ‘অনেকে বনসাইকে প্রকৃতিবিরোধী, নিষ্ঠুর শিল্পকর্ম হিসেবে আখ্যা দেন। কিন্তু আমি বলি বনসাই হচ্ছে ‘ লিভিং আর্ট’ বা জীবন্ত শিল্পকর্ম। একজন বনসাই শিল্পী তাঁর নিজস্ব কিছু দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটান নিজের সৃষ্টি কর্মে। প্রকৃতিতে একটি গাছের যেমন প্রচুর খাবার প্রয়োজন, বনসাইরও তেমনি পর্যাপ্ত খাবার দরকার। বনসাই শিল্পী পরম মমতায় সন্তানের স্নেহে গাছগুলো বড় করে তোলেন। তাই এখানে নিষ্ঠুরতার কোনো বিষয় নেই।’

গত শনিবার বিকেলে চাতরী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ছাদবাগান পরিচর্যা করছিলেন হারুন। দ্বিতল ভবনের ছাদে টব আর বস্তায় লাগানো আছে বিভিন্ন প্রজাতির চারা ও গাছ। লতাগুল্মজাতীয় আর গাছগাছালিকে পৃথকভাবে রাখা হয়েছে। দুই সিঁড়ি ঘরের ওপরে স্থান পেয়েছে বনসাই।

ব্যক্তিজীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ছাদবাগানের প্রতিটি গাছ আর বনসাই যেন একেকটি নিজের সন্তান। তাদের আর নিজ সন্তানের মধ্যে তেমন তফাৎ দেখেন না তিনি।