Thank you for trying Sticky AMP!!

একমাত্র ছেলে জুবায়ের চলে গেছে না-ফেরার দেশে। স্বামী জুলহাস তখনো বেঁচে, তবে ছিলেন সংকটাপন্ন। রাহিমা বেগম সেদিন এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে, কোনো সান্ত্বনায় বাঁধ মানছিল না তাঁর কান্না। এখন তিনি শোকে নির্বাক হয়ে পড়েছেন। শনিবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

ছেলের পরে স্বামী হারিয়ে নির্বাক রাহিমা

নারায়ণগঞ্জের মসজিদ বিস্ফোরণে না–ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে একমাত্র শিশুপুত্র জুবায়ের (৭)। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলো সে। এর পরের দিন দুর্ঘটনায় দগ্ধ স্বামী জুলহাস (৩০) ছেলের পথেই চলে গেলেন না–ফেরার দেশে। পরিবারে এখন রইলেন শুধু রাহিমা বেগম (২৪)। সন্তান-স্বামী হারিয়ে রাহিমা এখন নির্বাক। শুধু ফ্যালফ্যাল চোখে ইতিউতি খোঁজেন স্বামী-সন্তানকে।

জুলহাস-রাহিমা দম্পতির বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের বাহেরচর বাজারে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান জুলহাস ১০-১২ বছর বয়সেই হারিয়েছেন তাঁর বাবা বাচ্চু ফরাজীকে। সেই ছোট বয়সেই টানাপোড়েনের সংসারের হাল ধরতে হয় তাঁকে। ১০ বছর আগে জুলহাস পাশের গ্রামে রাহিমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পরই স্বামী-স্ত্রী দুজনই নারায়ণগঞ্জ চলে যান। সেখানে একটি পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ নেন দুজনই।

নিহত জুলহাসের স্ত্রী রাহিমা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী নিয়মিত নামাজ পড়তেন। দিনে-রাতে প্রায়ই ছেলেকে নিয়ে নামাজে যেতেন তিনি। কিন্তু ওই রাতে ছেলে যেতে চায়নি। সে টিভি দেখতে চেয়েছিল। তবুও ছেলেকে বাবার সঙ্গে নামাজে পাঠান তিনি। এ কথা বলেই ফ্যালফ্যাল চোখে চারদিকে কী যেন খোঁজেন রাহিমা।

Also Read: বার্ন ইউনিটের ভেতরে দগ্ধদের আর্তনাদ, বাইরে স্বজনদের আহাজারি

গত রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জুলহাস-রাহিমার সাত বছরের শিশুপুত্র জুবায়েরের জানাজা হয়। এরপর ওই ঈদগাহ–সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। আজ সোমবার সকাল নয়টায় একই স্থানে জুলহাসেরও জানাজা হয়। ১০টায় তাঁকে দাফন করা হয় ছেলের পাশেই।

ছেলের পরে স্বামী হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছেন রাহিমা বেগম। বোরবার সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে।

শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বিস্ফোরণের পর জুলহাস ও তাঁর শিশুপুত্র জুবায়েরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। ওই দিনই রাত একটায় শিশু জুবায়েরের হৃৎস্পন্দন থেমে যায়। রোববার ভোরে গ্রামের বাড়িতে ছেলের লাশ নিয়ে আসার পর সকাল আটটায় দাফনের প্রস্তুতিকালে খবর আসে, জুলহাসও মারা গেছেন। আজ সকাল ১০টায় একই স্থানে জুলহাসের জানাজা শেষে ছেলের পাশেই তাঁকে দাফন করা হয়।

শোকার্ত এ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে রোববার রাতে নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে ছুটে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাশফাকুর রহমান। ইউএনও সান্ত্বনা দিতে গিয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলেন। এ সময় ইউএনও ব্যক্তিগতভাবে এই পরিবারটিকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।

ইউএনও মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, জুলহাস ও জুবায়েরের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। উপজেলায় আরও দুজন এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তাঁদের পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা করা হবে।

Also Read: আব্বায় মাস শেষে টাকা পাঠাইতো, এখন পাঠাইবে কে