Thank you for trying Sticky AMP!!

ছেলের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে মায়ের অভিযোগ

মাকে ভুল বুঝিয়ে বসতভিটা লিখে নিয়েছেন ছেলে। এরপর প্রায়ই মাকে গালিগালাজ করেন, মারধর করেন। ঠিকমতো খেতে দেন না। শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন তাঁকে। চোখের পানি ফেলে সত্তরোর্ধ্ব সেই মা তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এসব অভিযোগ করেন। জমি ফেরত পেতে ও ছেলের কাছ থেকে ভরণপোষণের দাবিও জানান তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে নড়াইলের লোহাগড়ায় ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন মা সাকিরন নেছা। অভিযোগ পেয়ে মা ও ছেলেকে ডেকে শুনানি নেন ইউএনও। সাকিরন নেছা উপজেলা সদরের গোপীনাথপুরের মৃত সৈয়দ শমশের আলীর স্ত্রী।

ইউএনওর কাছে সাকিরন নেছা অভিযোগে বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেছেন ২০১০ সালে। ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট আমাকে ভুল বুঝিয়ে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ জমিসহ বসতভিটা লিখে নেয় ছেলে সৈয়দ প্রিন্স। দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় ভুল বুঝিয়ে বলেছিল “উইল করে নিচ্ছি, জমি তোমার থাকবে”। আমি পড়াশোনা জানি না। টিপসই দিই দলিলে। পরে জানতে পারি দলিল করে পুরো জমিসহ সম্পত্তি নিয়ে নিয়েছে। এরপর প্রায়ই আমাকে গালাগাল করে, মারধর করে। ঠিকমতো খেতে দেয় না। ১৫ দিন আগে সে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমার আর কোনো জায়গা-জমি নেই। মেয়ের কাছে উঠেছি। আমি জমি ফেরত চাই ও ভরণপোষণ চাই।’

সাকিরন নেছার তিন সন্তান। দরিদ্র আরেক সন্তান জাহাঙ্গীর আলম ও মেয়ে শিউলি পারভীনও এসেছিলেন মায়ের সঙ্গে। ওই দুই ভাইবোনও এ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

অভিযুক্ত ছেলে সৈয়দ প্রিন্স ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘জমি আমাকে সজ্ঞানে লিখে দিয়েছেন মা। এ জমি এখন ফেরত দেব না। ঠিকমতো খাবার দিই, মারধর করিনি। বাড়ি থেকে বেরও করে দিইনি।’

ইউএনওর কাছে অভিযোগ করার সময়ে দুচোখ দিয়ে অঝোরধারায় পানি ঝরছিল মায়ের। বুকফাটা কান্না বের হচ্ছিল তাঁর। এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কিন্তু নির্লিপ্ত ছেলেটির ছিল না কোনো অনুভূতি। মা কেঁদে কেঁদে বলছিলেন, ‘একাত্তর সালে ওই ছেলের জন্ম। শুধু কষ্ট করে পেটেই ধরিনি, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৩ দিন বয়সের ওই ছেলেকে কোলে-পিঠে নিয়ে এখান থেকে সেখানে পালিয়েছি। নিজে না খেয়ে তাকে খাইয়েছি। তিল তিল করে বড় করে তুলেছি। এখন সে আমাকে মারধর করে, খেতে দেয় না। আমাকে নিঃস্ব করে দিল সে।’

এ বিষয়ে ইউএনও মুকুল কুমার মৈত্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনানি নিয়ে ওই ছেলেকে এক সপ্তাহের মধ্যে জমি ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা না হলে থানায় বা আদালতে প্রতারণার মামলা করা হবে। আর ভরণপোষণ অন্য দুই সন্তান আপাতত দেবেন।’