Thank you for trying Sticky AMP!!

ছোটদের ফলে এগিয়ে গ্রামের বিদ্যালয়

জিপিএ ৫ পেয়ে শহরের শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস থাকলেও পাসের হারে এগিয়ে গেছে গ্রামের বিদ্যালয়গুলো। গত মঙ্গলবার কলেজিয়েট স্কুলে। প্রথম আালো

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় ফলাফলের অন্যতম সূচক পাসের হারে এবার প্রথম থেকে ষষ্ঠ স্থানে শহরের কোনো থানার জায়গা হয়নি। সবগুলোতেই উপজেলার জয়জয়কার। শহরের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস কম হওয়াসহ নানা অভিযোগের কথা শোনা যেত এত দিন। এবারের ফলাফল যেন সেটিরই প্রমাণ দিল।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে শিক্ষা থানা আছে ২০টি। প্রতিবারের মতো এবারও পাসের হারের ভিত্তিতে এই সব থানার ক্রমতালিকা করা হয়েছে। এই তালিকায় দেখা গেছে শীর্ষ ১০–এর মধ্য শহরের মাত্র তিনটি থানার জায়গা হয়েছে। অথচ গতবার প্রথম পাঁচটির তিনটিই ছিল শহর। গত ৩১ ডিসেম্বর এই ফলাফল প্রকাশিত হয়।

উপজেলাগুলোতে ভালো ফলের পেছনে চারটি কারণ পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো—দুপুর ১২টার বদলে সকাল সাড়ে নয়টা থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হওয়া। শিক্ষকদের দেওয়া নানা প্রশিক্ষণ ও কৌশল ক্লাসে প্রয়োগ করা। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিমুখী করতে শিক্ষকদের প্রচেষ্টা এবং দুর্বল শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে যত্ন নেওয়া।

একইভাবে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে শহরের থানাগুলোর পিছিয়ে যাওয়ার পেছনেও কয়েকটি কারণ পাওয়া গেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ফলে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে সন্তানদের প্রতি তেমন নজর নেই। এর ফলে অনেকেই ক্লাসে নিয়মিত নয়। পাশাপাশি শিক্ষকদেরও তাদের ক্লাসমুখী করতে তেমন উদ্যোগ নেই। নিয়মিত ক্লাসও হয় না।

বাঁশখালী উপজেলা থেকে এবার ১৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ হাজার ৬৮১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৮ হাজার ৬৫২ জন। অর্থাৎ পাসের হার ৯৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৭৭ জন। এ থানায় এবার মাত্র ২৯ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এবার তালিকায় শীর্ষে আছে এই থানা। গত বছর এই থানা পাসের হার অনুযায়ী তৃতীয় হয়েছিল।

>

পিইসির ফলাফল
গতবারের ফলাফলের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে শহরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো

ভালো ফলের পেছনে দুটি উদ্যোগের কথা জানান উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. নুরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মূলত তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়। তাঁরা বিদ্যালয়গুলোকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু করার জন্য বলেন। সে অনুযায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সঙ্গে তাদের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হতো। এ ছাড়া শিক্ষকদের জন্যও নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। সেই প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান তাঁরা শ্রেণি কার্যক্রমে প্রয়োগ করতে পেরেছেন। এসব কারণে ভালো ফল হয়েছে।

এবার সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে সন্দ্বীপ উপজেলা। গত বছর তালিকায় তলানিতে থাকা এই উপজেলা এবার ১৩ ধাপ এগিয়ে হয়েছে ষষ্ঠ। এ উপজেলায় ১৯২টি বিদ্যালয় থেকে ৫ হাজার ২০২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭৭ জন পাস করেছে। অর্থাৎ পাসের হার ৯৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৮৩ জন। অথচ গতবার পাসের হার ছিল ৯২ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এ উপজেলার শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গতবার ফল খারাপ হওয়ায় ২০১৯ সালের শুরু থেকেই একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেটি হলো—পঞ্চম শ্রেণিতে যেসব শিক্ষার্থী কিছুটা পিছিয়ে ছিল তাদের তদারকি করতে শিক্ষকদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এর ফলে শিক্ষকেরা সেসব শিক্ষার্থীর প্রতি আলাদা নজর দিয়েছেন। এ কারণে ফলও ভালো হয়েছে।

এ ছাড়া তালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছে যথাক্রমে রাউজান, পটিয়া, লোহাগাড়া ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার এগিয়ে যাওয়া ভালো লক্ষণ। তবে শহরের বিদ্যালয়গুলোতে ফল আগের চেয়ে খারাপ কেন হলো—তার কারণ খুঁজে বের করা হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বৈঠক করা হবে।