Thank you for trying Sticky AMP!!

জনগণই কিনল অ্যাম্বুলেন্স

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জনগণের টাকায় কেনা অ্যাম্বুলেন্স

অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে পথেই সন্তান জন্ম দিয়েছেন প্রসূতি। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার সময় মারা গেছেন কেউ কেউ। এতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আক্তার বুঝলেন, তাঁর এলাকার জন্য একটা অ্যাম্বুলেন্স দরকার। কিন্তু টাকায় কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছিল না। শেষে তিনি জনগণকেই আহ্বান করলেন টাকা দিতে।

প্রথমে কেউ কেউ আপত্তি করলেন। হাসি-ঠাট্টাও করলেন অনেকে। কিন্তু চেয়ারম্যান থেমে যাননি। সবাইকে বোঝালেন। তারপর জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই টাকা দিতে শুরু করলেন। দুই বছরে উঠল ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ৯ লাখ টাকায় নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স কেনা হলো।

বুধবার বিকেলে ইউপি কার্যালয় চত্বরে এ অ্যাম্বুলেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যাঁরা অ্যাম্বুলেন্স কেনার জন্য টাকা দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেককে চিঠি দিয়ে এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। দলমত–নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ইউপির পক্ষ থেকে তাঁদের একটি করে গোলাপ দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম।

ইউএনও জানে আলম বলেন, ‘আজ ১৭ মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এই দিনে দেওপাড়া ইউনিয়নবাসী একটি মহান কাজ করে জাতিকে দেখিয়ে দিল। এটা গোদাগাড়ী উপজেলাবাসীর জন্য গর্বের। ছোট ছোট উদ্যোগ যে কত বড় হতে পারে, তা দেওপাড়াবাসী দেখিয়ে দিলেন। এ জন্য আমি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানাই।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আরাফাত রহমান। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটা অ্যাম্বুলেন্স। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা কোনো রোগীর অবস্থা ভালো না থাকলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে একজন রোগীকে পাঠানোর পর দেখা যায় আরেকজন রোগীকেও পাঠানো প্রয়োজন। সেটা আর হতো না। দেওপাড়া ইউনিয়নবাসী তাঁদের নিজেদের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে স্বনির্ভর হয়ে গেল।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান আক্তার বললেন, ‘দুবছর আগে তিনি ১০ হাজার টাকা দিয়ে তহবিল চালু করেছিলেন। তারপর পরিষদের সব সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি গ্রাম পুলিশেরাও টাকা দিয়েছেন। যাঁরা বিভিন্ন ভাতা ভোগ করেন, তাঁদেরও বুঝিয়ে টাকা দিতে বলা হয়। তাঁরা টাকা দিয়েছেন। সর্বমোট ১ হাজার ৪৯৯ জন ব্যক্তির নাম লেখা আছে দাতা হিসেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছেন টাকা কেন দিতে হবে? কেউ কেউ তাচ্ছিল্য করেছেন। তাঁদেরও বিষয়টা বোঝানো হয়েছে। পরে তাঁরাও টাকা দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে টাকা দিয়েছেন। একজন সর্বনিম্ন ৪৫ টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন এ তহবিলে। মোট ১৫ লাখ টাকা উঠেছে। এর মধ্যে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স কেনা হয়েছে। বাকি টাকা এখনো তহবিলে আছে। অ্যাম্বুলেন্স কিনতে যাওয়া থেকে অন্যান্য খরচ এ তহবিল থেকে করা হয়নি।’ ইউনিয়নবাসীর উদ্দেশে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনার বাড়ির সামনে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স গেলে আপনি বুক উঁচিয়ে বলবেন, আমার টাকায় কেনা অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী জেলার সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা তাবাজ উদ্দীন, স্থানীয় গির্জার ফাদার মাইকেল কোরাইয়া, ফাদার আয়তুয়ো স্পেশিয়ালে, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় প্রমুখ।