Thank you for trying Sticky AMP!!

জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের প্রশ্রয়ে নৌযানে চাঁদাবাজির অভিযোগ

সিলেটের চেঙ্গেরখাল দিয়ে চলাচলকারী এসব নৌযান থেকে চাঁদা নেওয়া হয়। গত শনিবার বাদাঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

বর্ষাকালে সিলেট সদর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত চেঙ্গেরখালে বালু ও পাথরবাহী নৌযান চলাচল শুরু হয়। কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের জাফলং-বিছনাকান্দির পাথর কোয়ারি থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক পর্যন্ত চলাচল করে নৌযানগুলো। এবার বর্ষা শুরুর সঙ্গে চেঙ্গেরখালে চাঁদবাজিও শুরু হয়েছে।

তিন সপ্তাহ ধরে সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়ন এলাকায় নৌপথে চাঁদাবাজি চলছে। পাথর ও বালুবাহী নৌকা-কার্গো থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানার পুলিশকে নিয়ে জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনফর আলীর নেতৃত্বে একটি চাঁদাবাজ চক্র সক্রিয়। গত শুক্রবার রাতে স্থানীয় সাংসদ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে এলাকাবাসী চাঁদাবাজির বিষয়টি অবহিত করে প্রতিকার চেয়েছেন।

চেঙ্গেরখালের জালালাবাদ ইউনিয়ন এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, চেঙ্গেরখাল নদী দিয়ে প্রতিদিন দেড় শতাধিক পাথর ও বালুবাহী নৌযান চলাচল করে। এসব নৌযান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। ৫ মে থেকে হঠাৎ মনফর আলী ও তাঁর ভাই আনফর আলী টোকেন দিয়ে চাঁদা আদায় শুরু করেন। একটি কার্গো ও নৌকা থেকে প্রতিদিন এক হাজার আবার কোনোটি থেকে দেড় হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নৌকার মাঝিসহ শ্রমিকদের মারধরের ঘটনাও ঘটে।

নৌযানের চালকেরা জানান, চাঁদাবাজেরা ‘স্থানীয় সরকার বিভাগ সচিবালয় ঢাকা’ লেখা একটি রসিদ ধরিয়ে দেয়। এতে টোল আদায়ের রসিদ লেখা রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া পাথরবাহী কার্গো ‘এমভি মোহনা ২’–এর চালক বাবুল মিয়া অভিযোগ করেন, তাঁর কাছ থেকে জোর করে ১ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে গেছে চাঁদাবাজ চক্র। মারধরের ভয়ে তিনি এই চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

‘এমভি মিরাকা-৬’–এর মালিক মতিন মাতব্বর বলেন, এভাবে নতুন নতুন জায়গায় চাঁদাবাজি বাড়তে থাকলে সিলেটকেন্দ্রিক যাতায়াত বন্ধ করে দিতে হবে। তিনি চাঁদা না দেওয়ায় তাঁর কার্গো এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল বলে জানান। এরপর ব্যবসার স্বার্থে তাঁর চালক চাঁদা দিতে বাধ্য হন।

নৌযানের চালক ও স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, জালালাবাদ ইউপির কলারুকা পশ্চিম গ্রাম থেকে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মনফর আলীর প্রভাবে তাঁর ভাই আনফর আলীর নেতৃত্বে আবদুর রহমান, শাহাব উদ্দিন, কুতুব উদ্দিনসহ ২০ জনের একটি চক্র এই চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যানের প্রভাবে মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার একদল পুলিশও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে গত শুক্রবার রাতে এ কে আব্দুল মোমেনকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নৌপথে নৌযানে চাঁদাবাজির বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এলাকাবাসীর পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন পেশজীবী ব্যক্তি নৌপথে চাঁদাবাজি আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে করছে এবং এতে জালালাবাদ থানার পুলিশও জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ শুনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

যোগাযোগ করলে মনফর আলী চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন। গত শনিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে জড়িয়ে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি নিজে অসুস্থ হয়ে শহরে থাকি। মন্ত্রীর কাছে আমার নামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে শুনেছি। আমার নাম ব্যবহার করে বেহুদা কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। যারা এমন অভিযোগ করছেন, তারাই সারা জীবন ধরে ওই এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছেন বলে শুনেছি।’

পুলিশ জড়িত থাকার বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জেদান আল মুসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌপথে নৌযানে চাঁদাবাজিতে পুলিশ জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। কিন্তু এ রকম অভিযোগ কেউ করেনি।’