Thank you for trying Sticky AMP!!

জনস্বার্থে তালবীজ রোপণ করে যাচ্ছেন দিনমজুর মান্নান

তালগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত আবদুল মান্নান।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার রায়দৌলতপুর গ্রামের একটি সড়কে দুই পাশে সারি সারি তালগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। আর তালগাছের কারণে পাল্টে গেছে সড়কটির দৃশ্যপট। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বজ্রপাত থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষায় সড়কের দুই পাশে তালবীজ রোপণ করেছিলেন ওই গ্রামের ৬৮ বছর বয়সী দিনমজুর আবদুল মান্নান মল্লিক।

হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম হলেও ছোটবেলা থেকে বৃক্ষ রোপণের নেশা মান্নানের। দারিদ্র্যের কারণে পড়ালেখা করতে পারেননি তিনি। ছোটবেলা থেকেই তিনি গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ও খেতে খামারে দিনমজুরের কাজ করেন। তিন মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে তাঁর পরিবার। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে তাঁর পরিবার নিয়ে আলাদা বাস করেন। বর্তমানে বাড়িতে তিনি ও তাঁর স্ত্রী থাকেন। দিনমজুরি করে যা অর্থ পান, তা দিয়ে তাঁদের দুজনের সংসার কোনোরকমে চলে যায়। দিনমজুরির ফাঁকে যতটুকু সময় পান, তা ব্যয় করেন তালবীজ রোপণ ও তালের চারা পরিচর্যায়। একটি বাগান গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল তাঁর। ছোট্ট একটি বসতভিটাই সম্বল হওয়ায় মান্নান তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে বাড়ির পাশে গ্রামের পাকা সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে রোপণ করতে থাকেন তালের বীজ। এসব বীজ তিনি গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে কুড়িয়ে আনেন। এখন তাঁর নিজ গ্রামের পাকা সড়কের দুই পাশে অসংখ্য তালগাছ জেগে উঠেছে।

সরেজমিনে ওই সড়কে দেখা গেছে, তালগাছগুলো পরিচর্যায় ব্যস্ত মান্নান মল্লিক। মান্নান বলেন, ছোটবেলা থেকেই তাঁর বাগান করার শখ। কিন্তু জমি না থাকায় সে শখ তাঁর পূরণ হয়নি। পরে স্বপ্নপূরণের আশায় গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে তালের বীজ সংগ্রহ করে এবং কুড়িয়ে নিয়ে এসে প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে তা রোপণ করে চলেছেন। প্রায় পাঁচ শ তালগাছ অনেক বড় হয়ে উঠেছিল। এর মধ্যে দুই শ গাছ সড়কের পাশের জমির মালিকেরা ফসলের ক্ষতি হবে বলে কেটে ফেলেছেন। এখনো ১৩০টি বড় তালগাছসহ অসংখ্য ছোট ছোট তালগাছ রয়েছে রায়দৌলতপুর গ্রামের পাকা সড়কের দুই পাশে। এগুলোর পরিচর্যা দরকার। কিন্তু অর্থের অভাবে পরিচর্যা করতে পারছেন না বলে জানান তিনি।

তালগাছগুলোর মালিকানার বিষয়ে মান্নান বলেন, এই তালগাছগুলোর মালিকানা নিয়ে তাঁর চাওয়া-পাওয়ার কিছুই নেই। গাছগুলো বড় হবে, ফল ধরবে। আশপাশের গ্রামের মানুষ তা খাবে। তাতেই তাঁর আশা পূরণ হবে।

কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামের একজন দিনমজুরের এমন উদ্যোগে তিনি মুগ্ধ। তিনি এই উদ্যোগকে আরও বেগবান করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মান্নানের পাশে দাঁড়াবেন।