Thank you for trying Sticky AMP!!

জবির প্রথম সমাবর্তন ঘিরে উচ্ছ্বাস

অনেক দিন পর দেখা বন্ধুদের, ছবি তুলে স্ক্রিনে তাই দেখছেন তাঁরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ছবি: প্রথম আলো

ক্যাম্পাসজুড়ে কালো গাউন ও টুপি পরা একদল তরুণের উচ্ছ্বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কাঁঠালতলাসহ বিভিন্ন অনুষদের চত্বরে ছোটাছুটি করছেন তাঁরা। অনেকে প্রিয় বন্ধু, সহপাঠীকে জড়িয়ে ধরছেন। বড় ও ছোট ভাইবোনদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন কেউ। কেউ ফ্রেমবন্দী করছেন মুহূর্তগুলো।

এই আবেগ, উচ্ছ্বাস, উৎসাহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আসা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের। প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর আজ শনিবার প্রথম সমাবর্তনের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ। এতে ৩৬টি বিভাগের ১৮ হাজার ৩১৭ জনকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হবে।

সমাবর্তন উপলক্ষে আগে থেকেই ক্যাম্পাস নতুন রূপে সাজানো হয়। ফুল, ব্যানার, ফেস্টুনে সব ভবন সাজানো হয়েছে। রাতে বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, প্রধান সড়ক, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ সব অবকাঠামোয় আলোকসজ্জা করা হয়। সমাবর্তনে আসা শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে নির্মাণ করা হয় তোরণ।

সমাবর্তনীদের মধ্যে পোশাক বিতরণ করা হয় গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত। সেসব পরে গতকাল সমাবর্তনের মহড়াও হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিভাগসহ স্মৃতিবিজড়িত নানা স্থানে সেলফি তোলেন অনেকে। ক্যাম্পাসসহ পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আহসান মঞ্জিল, বিউটি বোর্ডিং, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, বাংলাবাজার ও লক্ষ্মীবাজারে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠেন অনেকে।

টুপি উড়িয়ে সমাবর্তনের ‘সিগনেচার পোজ’। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ছবি: দীপু মালাকার

সরেজমিনে দেখা যায়, কালো গাউন ও টুপি পরে সবাই ক্যাম্পাসে হাজির। সবাই ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছেন স্মৃতিময় নানা স্থানে তুলছেন ছবি, সেলফি। তাঁদেরই একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী প্রথম ব্যাচের সুজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে সমাবর্তনের দিনটি খুবই মূল্যবান। একই সঙ্গে আবেগ, ভালোবাসা ও সম্মানের। এ দিনটি স্মরণীয় করে রাখতেই বন্ধুবান্ধব-শিক্ষকদের সঙ্গে প্রিয় কিছু মুহূর্তকে ফ্রেমে বন্দী করতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম। সত্যি বলতে এই আনন্দ ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ পুরোপুরি সম্ভব না।’

প্রশাসনিক ভবনের সামনে ছবি তুলছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাওহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সমাবর্তন আসলে একই সঙ্গে বিদায়ের শোক আর প্রাপ্তির সুখ। প্রথম সমাবর্তনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। হোক একটু দেরিতে কিন্তু সমাবর্তনের শুরুটাই আসল।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও এত দিন স্থান সংকুলানের অভাবে সমাবর্তন আয়োজন করা হয়নি। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ধূপখোলায় প্রথম সমাবর্তন আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে থাকছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক পদার্থবিজ্ঞানী অরুণ কুমার। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সমাবর্তনে ১১ হাজার ৮৭৭ জনকে স্নাতক, ৪ হাজার ৮২৯ জনকে স্নাতকোত্তর, ১ হাজার ৫৯৪ জনকে সন্ধ্যাকালীন স্নাতকোত্তর, ১১ জনকে এমফিল ও ৬ জনকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে।

মাথায় টুপির ওপর টুপি সাজিয়েছেন একজন। পাশে অন্যরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ছবি: প্রথম আলো

সমাবর্তনী শিক্ষার্থীরা বলেন, দেরিতে হলেও সমাবর্তনে অংশ নিতে পেরে তাঁরা সম্মানিত বোধ করছেন। এটা ছিল তাঁদের অন্যতম চাওয়া। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ সে চাওয়া পূরণ করার জন্য। তাঁরা আশা করেন, এখন থেকে প্রতিবছর সমাবর্তনের আয়োজন করবে কর্তৃপক্ষ।

রসায়ন বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমরান খান বলেন, একটি সমাবর্তন যেটুকু শিক্ষার্থীদের জন্য, তার চেয়ে বেশি বাবা-মা ও অভিভাবকদের জন্য। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে অভিভাবকদের সুযোগ রাখা হয়নি। যদি অভিভাবকেরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারতেন, তাহলে সেটি বাড়তি মাত্রা যোগ করত।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, স্থান সংকুলান না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে সমাবর্তন আয়োজন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এখন আমাদের একটি অভিজ্ঞতা হচ্ছে। এটি কাজে লাগিয়ে আশা করি প্রতিবছর সমাবর্তন আয়োজন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি আগামী বছর থেকে সমাবর্তনে অভিভাবকদের আনার চেষ্টা করা হবে।

দিনব্যাপী আয়োজন: বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রদর্শনী, কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় পাঁচটি নাটক (দ্য ম্যারেজ প্রপোজাল, মৃৎপাত্র, দুই জল্লাদ, সোয়ান সং ও দ্য গেম) পরিবেশনা, সংগীত বিভাগের উদ্যোগে সংগীতানুষ্ঠান ও শিল্পী বাপ্পা মজুমদারের কনসার্ট।