Thank you for trying Sticky AMP!!

জলাবদ্ধতায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী কমেছে স্কুলটির

সরু বেঞ্চের ওপর দিয়ে ব্যাগ কাঁধে শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে ছেলেমেয়েরা। ৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জের ইসদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দিনার মাহমুদ

সামান্য বৃষ্টিতেই বিদ্যালয়টির সামনের সড়ক ও মাঠ তলিয়ে যায়। বৃষ্টি শেষে বিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকার পানি জমে। সঙ্গে ভেসে আসে ময়লা-আবর্জনা। সে পানিই ধীরে ধীরে প্রবেশ করে শ্রেণিকক্ষে।

১৫ বছর ধরে এমন অবস্থার মধ্যে চলছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ইসদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির কার্যক্রম। বিদ্যালয়টিতে একসময় ১ হাজার ৫৮০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ৬৪৫ জনে। শিক্ষকদের তথ্যমতে, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকসহ অন্যান্য সুবিধা থাকা সত্ত্বেও শুধু জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যালয়ে বিগত বছরগুলোতে প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী কমে গেছে।

৭ মার্চ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির সামনের উপজেলা সড়কটিতে পানি জমে আছে। নোংরা পানিতে তলিয়ে গেছে মাঠ ও কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ। পানি এড়াতে বিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে দুটি ভবন ও শৌচাগার পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে কাঠের বেঞ্চ বিছিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরু বেঞ্চের ওপর দিয়ে ব্যাগ কাঁধে শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা। কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, এখানে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই পানির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের। পানির কারণে খেলাধুলা বন্ধ থাকে। বদ্ধ জলে জন্ম নেওয়া মশার উৎপাতে শ্রেণিকক্ষে বসা যায় না। বিদ্যালয়ের মধ্যাহ্নবিরতিতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে শৌচাগার ব্যবহার ও পানি সংগ্রহের জন্য যাচ্ছে। সরু বেঞ্চে একজন আরেকজনকে জায়গা করে দিতে গিয়ে নোংরা পানিতে নামতে বাধ্য হচ্ছে কেউ কেউ।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লতিফা নাহার বলেন, ‘২০০৪ সালের পর থেকে বছরের অন্তত ছয় মাস আমরা জলাবদ্ধতায় থাকি। বিগত বছরগুলোতে জনপ্রতিনিধিসহ নানাজনের কাছে সমাধান চেয়েও পাইনি। কয়েক মাস আগে আমাদের বেতনের টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে বালু ফেলেছি। তাতেও ফল হয়নি। বিদ্যালয়ের সামনের সড়কটিতে একটি নালা করা হলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।’

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান জানান, বৃষ্টিতে আশপাশের এলাকায়ও পানি জমত। সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশন সেখানে নালা তৈরি করেছে। বিদ্যালয়টি সিটি করপোরেশন এলাকায় না হওয়ায় এখানে নালা তৈরি হচ্ছে না। দেড় বছর আগে বিদ্যালয়ের সামনের সড়কটি পাকা করার সময় এলজিইডিকে অনুরোধ করা হয়েছিল একটি নালা তৈরি করে দেওয়ার জন্য। সেটা হয়নি।

বিদ্যালয়টির সামনের সড়কে আপাতত কোনো নালা তৈরির পরিকল্পনা নেই বলে জানান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসউজ্জামান। তিনি বলেন, আশপাশের খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় সে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। খাল পুনরুদ্ধার হলেই জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।

জানতে চাইলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয় থেকে কেউ বিষয়টি আমাকে জানায়নি। শুনেছি সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। সেই এলাকার সাংসদ (এ কে এম শামীম ওসমান) চাইলে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর দুর্ভোগ দূর করতে পারতেন। তিনি চাইলে এলজিইডিও সেখানে নালা তৈরি করতে পারে।’

নারায়ণগঞ্জের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মজিব আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। বিদ্যালয়টিকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে আগামী উপজেলা উন্নয়ন সভায় বিষয়টি তুলে ধরব।’

১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পিছিয়ে নেই। প্রাথমিক সমাপনীতে প্রতিষ্ঠানটির পাশের হার শতভাগ। ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে জাতীয় পর্যায়ে রানার্সআপ হয় এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।