Thank you for trying Sticky AMP!!

জাল ভরে উঠছে ইলিশ, উৎসবের আমেজে জেলেরা

ফেনী নদী থেকে ধরে আনা মাছ আড়তের সামনে রেখে দাম হাঁকানো হচ্ছে। ইলিশ কিনতে ও দেখতে ব্যাপারী ও উৎসুক জনতার ভিড়। সোমবার দুপুরে উপজেলার চর খোন্দকার এলাকায় বড় ফেনী নদীর তীরবর্তী জেলেপাড়ায়।

বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীতে জাল ফেললেই ধরা পড়ছে রুপালি ইলিশ। জাল ভরে মাছ আসায় ফেনীর সোনাগাজীতে ইলিশ শিকারি ও জেলেদের ঘরে সুদিন ফিরে এসেছে। এক সপ্তাহ ধরে বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীর উপকূলজুড়ে যেন ইলিশ ধরার উৎসব চলছে। জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় জেলে ও বিক্রেতারা অনেক খুশি। দামও অনেকটা নাগালে মধ্যে।

সোনাগাজী উপজেলায় ১ হাজার ৬২৪টি নিবন্ধিত জেলে পরিবার রয়েছে। এর বাইরেও আরও প্রায় কয়েক শ মৌসুমি মৎস্যজীবী আছেন। ১৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে। তাই উপজেলার মুহুরী প্রকল্প, চর খোন্দকার, দক্ষিণ চর চান্দিয়া, মুছাপুর, সন্দ্বীপ চ্যানেলসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় ও ঘাটে শত শত জেলে ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা ও ট্রলারে করে নদী ও সাগরে মাছ ধরায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীর উপকূলজুড়ে কয়েক হাজার জেলে নৌকা ও ট্রলারে করে ইলিশ ধরছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চর খোন্দকার, জেলেপাড়া ও মুছাপুর এলাকায় নদী ও সাগর থেকে জেলেরা নৌকা ও ট্রলারে মাছ বোঝাই করে বাজারজাত করার জন্য উপকূলে এসে মহাজনের কাছে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশগুলোর ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত দেখা গেছে। তবে এক কেজি থেকে দুই কেজির ইলিশ ধরা পড়লেও সংখ্যায় কম। এসব মাছ সোনাগাজী, ফেনী, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।

চর খোন্দকার জেলেপাড়ার প্রিয় লাল জলদাস বলেন, এবার নদীতে গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলে ও মৎস্যজীবীরা বেশি বেশি মাছ ধরতে পেরে অনেক খুশি। এভাবে আগামী নিষেধাজ্ঞার আগপর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়লে জেলেদের অভাব এবং বাজারে ইলিশের সংকট থাকবে না।

ট্রলার থেকে ইলিশ নামিয়ে বিক্রির জন্য আড়তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সোমবার দুপুরে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর খোন্দকার এলাকার জেলেপাড়ায়

মাছ ধরার ট্রলারমালিক মানিক মিয়া জানান, সম্প্রতি ৬৫ দিন নদী ও সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় দুই সপ্তাহ ধরে নদীতে প্রচুর ইলিশসহ অন্যান্য মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে জেলে, মাঝি, মহাজন ও আড়তদারেরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। মাছের দামও বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক ট্রলারের মালিক ও মহাজন সারা বছরের আয় গত দুই সপ্তাহে করে ফেলেছেন।

উপজেলার জেলেপাড়ার মাছ ধরার ট্রলারের মালিক সফি উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ট্রলারে মাঝিসহ ১২ জন লোক ইলিশ ধরার কাজ করছেন। গত দুই সপ্তাহে প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। মাছ বিক্রি করে তিনি ছয়-সাত লাখ টাকা লাভ করেছেন। সামনে আবারও মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আসছে। তাই গত দুই সপ্তাহের মতো আবারও জাল ভরে মাছ ধরতে পারলে পুরো বছরের আয় হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ঋণও পরিশোধ করা যাবে। তিনি আশা করছেন, কয়েক দিন পর পূর্ণিমায় নদীতে বেশ ভালো মাছ ধরা পড়বে।

ফেনী শহর থেকে ইলিশ কিনতে আসা শেখ ফরিদ বলেন, তিনি সোনাগাজী পৌর শহর থেকে ২ কেজি ওজনের একটি ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে এবং ১ কেজি ওজনের দুটি ইলিশ ৮০০ টাকা করে কিনেছেন।

সোনাগাজী পৌর শহরের মাছ ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, নদীতে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ায় বিক্রি এবং বাজারে চাহিদাও বেশ ভালো রয়েছে। তিনি বলেন, ২০০-৪০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ৩৫০ টাকা, ৫০০-৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ ৫০০-৬০০ টাকায় এবং ৯০০-১০০০ গ্রামের বেশি ইলিশ ৭৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন।

বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে তাজা ইলিশ মাছ। সোনাগাজী উপজেলার চর খোন্দকার এলাকায়

নেয়ামত উল্যাহ নামের আরেক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, বড় ফেনী ও ছোট ফেনী নদীর ইলিশ মাছের স্বাদ বেশ ভালো। বাজারে অনেক ক্রেতা জিজ্ঞেস করে নেন মাছগুলো কোন নদীর। তিনি চর খোন্দকার ও মুছাপুর ঘাট থেকে ইলিশ এনে সোনাগাজী পৌর শহরে বিক্রি করেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহা প্রথম আলোকে বলেন, সোনাগাজী উপজেলায় ১ হাজার ৬২৪ জন নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ছয় শতাধিক জেলে ইলিশ শিকার করেন। এর বাইরেও স্থানীয় কয়েক শ জেলে রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আরও প্রায় দুই শ জেলে ইলিশ ধরায় যোগ দেন। এবার নদীতে গত বছরের চেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেরা বেশ খোশমেজাজে রয়েছেন। মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে প্রধান প্রজনন মৌসুমে নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ সময়ে জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলে আগামী দিনে আরও বেশি ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা পড়বে।