‘জাড়ে ম্যালা কষ্ট, কম্বলখান প্যায়ে উপকার হলো’
‘ছলেরা বউ-ছাওয়াল লিয়ে আলাদা সংসার করে থাকে। ওরা হামাক কেউ দ্যাখে না। স্বামীও মরে গেছে। বেড়ার বাড়িত জাড়ে (শীত) ম্যালা কষ্ট। কেউ হামার দিকে ফিরেও তাকায় না। তোমরা অনেক দূরত থেকে কম্বল দিতে আছিল। কম্বলখান প্যায়ে উপকার হলো। ভগবান তোমাগেরে ভালো করবে।’
নওগাঁ বন্ধুসভার কাছ থেকে প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া কম্বল পেয়ে এমন কথাই বলেন ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ নারী সুরবালা রাণী। আজ বৃহস্পতিবার নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের ছিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ২৪০ জন শীতার্ত মানুষকে কম্বল দেওয়া হয়। সেখানেই এসেছিলেন সুরবালা রাণী। তাঁর বাড়ি কাটাবাড়ি গ্রামে।
কম্বল বিতরণের জন্য দুই দিন ধরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত রাইগাঁ ইউনিয়নের ছিলিমপুর, কালনা, কাটাবাড়ী ও নাউরাইল গ্রামে গিয়ে শীতার্ত মানুষের মধ্যে স্লিপ বিতরণ করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।
অন্যদের মধ্যে কম্বল নিতে এসেছিলেন নাউরাইল গ্রামের নাসিমা খাতুন। কম্বল পেয়ে তিনি বলেন, ‘স্বামী প্রতিবন্ধী মানুষ। খ্যাটতে পারে না। হামি ম্যানষের বাড়িত কামকাজ করে স্বামী-ছলের মুখত কোনোমতোন খাবার জোটাই। টাকার অভাবে গরম কাপড় কিনতে পারি না। চালার বাড়িত সন্ধ্যা হলেও ঠান্ডাত খুব কষ্ট হয়। তোমাগেরে কম্বলটা প্যায়ে খুব উপকার হলো।’
কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ বন্ধুসভার সভাপতি লিনা আলী, সদর উপজেলার তেঁতুলিয়া কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মল্লিক, সহসভাপতি ফারহান শাহরিয়ার বাঁধন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাবেয়া আফরোজ, নাফিছ আরা পপি, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ইয়া কাহারুল নয়ন, ছিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, প্রথম আলোর নওগাঁ প্রতিনিধি ওমর ফারুক প্রমুখ।
কম্বল পেয়ে কাটাবাড়ি গ্রামের মালতি রাণী জানান, মাটির দেয়াল ও টিনের চালার বাড়িত থাকেন তিনি। রাতে দুটি কাঁথা দিয়েও শীত কাটে না তাঁর। তাই কম্বলটি পেয়ে বেশ ভালো হলো।
কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে তেঁতুলিয়া কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, উত্তরের জেলা নওগাঁয় শীত জেঁকে বসেছে। তীব্র শীতে অসহায় শীতার্ত মানুষেরা খুব কষ্টে আছে। প্রথম আলো বন্ধুসভার মতো সমাজের অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সচ্ছল ব্যক্তিদের শীতার্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসা উচিত।