Thank you for trying Sticky AMP!!

জীবন বাজি রেখে জনসেবা

নাটোরের গুরুদাসপুরে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা এক ব্যক্তির বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির স্বেচ্ছাসেবকেরা। ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এখন অনেকেই ঘরে অবস্থান করছেন। বেশির ভাগ মানুষ পরিবার ও নিজের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাচ্ছেন না। কিন্তু নাটোরের গুরুদাসপুরে ৪৪ জন এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষের সহায়তার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁরা তাঁদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। জেলার বাইরে থেকে কেউ এলে তাঁর তথ্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এর সঙ্গে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছেন তাঁরা।

নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন ৪৪ জন স্বেচ্ছাসেবক। তাঁরা গুরুদাসপুর উপজেলায় করোনাের সংক্রমণে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা দুজনসহ ১৭৪টি পরিবারের বাড়িতে গিয়ে লাল পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা স্বাস্থ্যকর্মীদের এসব বাড়িতে আনা–নেওয়ার কাজটিও করছেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এই স্বেচ্ছাসেবক দলে আছেন দুজন নারী। এঁদের মধ্যে একজন বিএ পাস, অন্যজন ডিগ্রিতে পড়ছেন। পুরুষদের মধ্যে ৮ জন স্নাতকোত্তর ও ১৫ জন বিএসসি শেষ করেছেন। এ ছাড়া ৬ জন চাকরিজীবী, একজন সাংবাদিক, একজন ব্যবসায়ী ও ১১ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন ইসতিয়াক শান্ত। উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নে তাঁর বাড়ি। ঢাকায় একটি বায়িং হাউসে চাকরি করছেন। করোনার কারণে স্ত্রী আর দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে এখন গ্রামে অবস্থান করছেন। এই দুর্যোগের সময় দেশের মানুষের কথা ভেবে নাম লিখিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকের তালিকায়।

আরেক স্বেচ্ছাসেবক সালমা জাহান। সবে বিএ পাস করে বাসাতেই রয়েছেন। করোনায় দেশের সংকটময় মুহূর্তে স্বেচ্ছাসেবকের তালিকায় নাম তুলেছেন। শুরুতে পরিবার থেকে বাধা এলেও পরে সব ঠিক হয়ে গেছে।
স্বেচ্ছাসেবক হতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন তাঁরা। চূড়ান্ত তালিকা ধরে করোনাকালে তাঁদের করণীয় সম্পর্কে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল ১০ এপ্রিল। ইউএনও মো. তমাল হোসেন ওই প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। সেই দিকনির্দেশনা অনুসরণ করেই মাঠে কাজ করছেন তাঁরা। এ জন্য সরকারিভাবে ভাতা না পেলেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী, মনোগ্রামসহ বিশেষ পোশাক, পরিচয়পত্র, যাতায়াতের জন্য বিশেষ প্রণোদনা।

স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবু হাসান বলেন, দিনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের করণীয় সম্পর্কে প্রতিদিন সকালে নির্দেশনা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সুবিধা–অসুবিধা বুঝে করণীয় ঠিক করাসহ নির্দেশনাও দেন ইউএনও। সেই নির্দেশনা নিয়েই দল বেঁধে সবাই ছড়িয়ে পড়েন নির্ধারিত এলাকায়।
ইউএনও মো. তমাল হোসেন বলেন, 'প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের কাজের সুবিধার জন্য পৌরসভাসহ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে সাতটি দলে তাঁদের ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ৬-৭ সদস্যের প্রতিটি দলে রয়েছেন একজন করে সরকারি কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার)। দিনের কাজ নিয়ে আগের দিন নির্দেশনা থাকে করোনা সহায়তাকেন্দ্র থেকে। সেই নির্দেশনার বাস্তবায়নের প্রতিবেদন ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে জমা হয় করোনা সহায়তাকেন্দ্রে।'

ইউএনও বলেন, তাঁকে সহযোগিতার জন্য তিনজন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। তাঁরা হলেন ক্রীড়াবিদ মমিজানুর রহমান, রোভার স্কাউটস মো. রাসেল আলী ও তাঁর কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আনোয়ার হোসেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে সহায়তা কেন্দ্রের হেল্পলাইনে (০১৩১৫১৭১৩৫৪ ও ০১৭৮৯২৮৯০০০) গ্রামে ফেরা মানুষের তথ্য লিখে রাখছেন তাঁরা।

স্বেচ্ছাসেবকদের কার্যক্রম সম্পর্কে ইউএনও মো. তমাল হোসেন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ খাদ্যসামগ্রী বিতরণের জন্য তাঁর দপ্তরে পাঠান। হেল্পলাইনে কোনো পরিবার সহায়তা চাইলে সেই পরিবারকে রাতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে স্বেচ্ছাসেবকেরা। তা ছাড়া চলনবিলে ধানকাটা শ্রমিকদের খাদ্য, পানি সরবরাহ, চিকিৎসা ও তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করার কাজটিও করছে তাঁরা।

স্বেচ্ছাসেবকদের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, জেলাজুড়ে স্বেচ্ছাসেবকদের এ কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কারণ, করোনা পরিস্থিতি শুধু প্রশাসনের পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সম্মিলিতভাবেই করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।