Thank you for trying Sticky AMP!!

টাঙ্গাইলে দুই শিশুকে হত্যায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৩ জনের আমৃত্যু কারাবাস

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে চতুর্থ শ্রেণিপড়ুয়া দুই ছাত্রকে অপহরণের পর হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ে অভিযুক্ত ৯ আসামির মধ্যে ৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ৩ জনের আমৃত্যু কারাবাস এবং অপর ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে টাঙ্গাইলের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সাউদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দণ্ডিত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার চর চৌহাট গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে মিল্টন, একই গ্রামের শামছুল হকের ছেলে বাহাদুর মিয়া ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার সুজানিলজা গ্রামের বাছেদ মিয়ার ছেলে রনি মিয়া। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন ধামরাই উপজেলার চৌহাট গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে শাহিনুর, শশধরপট্টি গ্রামের মমরেজের ছেলে জহিরুল ইসলাম ও মির্জাপুর উপজেলার আমরাইল তেলীপাড়া গ্রামের শাহাদত হোসেনের ছেলে আবদুল মালেক। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন ধামরাই উপজেলার চর চৌহাট গ্রামের তাজেল মিয়ার ছেলে আরিফ, মির্জাপুর উপজেলার আমরাইল তেলীপাড়ার জব্বার মল্লিকের ছেলে জাকির হোসেন ও ধামরাই উপজেলার চর চৌহাট গ্রামের আফসার উদ্দিনের ছেলে শামীম মিয়া।

রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিত ব্যক্তিদের মধ্যে আট আসামিকে আদালতে হাজির ছিলেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন দণ্ডিত আরিফ পলাতক।

২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে চতুর্থ শ্রেণিপড়ুয়া ওই দুই শিশু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। সন্ধ্যার পর বাড়িতে না আসায় তাদের খোঁজাখুঁজি করেন পরিবারের লোকজন। পরদিন ২৮ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোন করে বলেন, শাকিল ও ইমরানকে অপহরণ করেছেন তাঁরা। দুজনকে ছাড়িয়ে নিতে এক লাখ টাকা করে লাগবে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, নিহত দুই শিশুর একজনের নাম শাকিল (১১)। ঢাকার ধামরাই উপজেলার চর চৌহাট এলাকার প্রবাসী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সে। অপর শিশুটির নাম ইমরান (১১)। সে একই এলাকার প্রবাসী আবু বক্করের ছেলে। ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে চতুর্থ শ্রেণিপড়ুয়া ওই দুই শিশু টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার হাড়িয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। সন্ধ্যার পর বাড়িতে না আসায় তাদের খোঁজাখুঁজি করেন পরিবারের লোকজন। পরদিন ২৮ জানুয়ারি শাকিলের মা জোছনা বেগমের কাছে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোন করে বলেন, শাকিল ও ইমরানকে অপহরণ করেছেন তাঁরা। দুজনকে ছাড়িয়ে নিতে এক লাখ টাকা করে লাগবে। এরপর থেকে ওই ফোন নম্বরটি বন্ধ করে রাখেন অপহরণকারীরা। পরদিন ২৯ জানুয়ারি বিকেল চারটার দিকে মির্জাপুর উপজেলার কামারপাড়া এলাকার একটি লেবুখেত থেকে ইমরান ও শাকিলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়।

রায়ের জরিমানাকৃত অর্ধেক টাকা নিহত দুই শিশুর পরিবার পাবে। বাকি অর্ধেক টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।
খোরশেদ আলম, অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি)

এ ঘটনায় নিহত শাকিলের মা বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মির্জাপুর থানায় মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত করে দেখতে পায়, ঘটনার সঙ্গে নিহত শিশুদের কয়েকজন আত্মীয় জড়িত। পরে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে মিল্টন, বাহাদুর মিয়া, শাহিনুর, জহিরুল ইসলাম ও রনি মিয়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এ ঘটনায় পুলিশ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৬ সালের ৮ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। ১৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জন আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।

আজ রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) খোরশেদ আলম বলেন, রায়ের জরিমানাকৃত অর্ধেক টাকা নিহত দুই শিশুর পরিবার পাবে। বাকি অর্ধেক টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে।

আদালতে উপস্থিত শাকিলের মা জোছনা বেগম ও ইমরানের মা সুফিয়া বেগম বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর অপেক্ষার পর ছেলে হত্যার বিচার পেলেন। এ রায়ে তাঁরা সন্তুষ্ট। এখন তাঁদের সরকারের কাছে আবেদন, আসামিদের ফাঁসি যেন দ্রুত কার্যকর হয়।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্ত পিপি রফিকুল ইসলাম খান। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মীর শামছুল আলম শাহজাদা, আবদুল বাকি মিয়া ও এ কে এম শামিমুল আক্তার। পলাতক আসামি আরিফের পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ তাজউল ইসলাম।