Thank you for trying Sticky AMP!!

ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে ‘অস্বাভাবিক’ হারে

গত ৮ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৬০৬ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন চারজন

নোয়াখালী জেলার মানচিত্র

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চর বাগ্গা এলাকায় বাবার বাড়িতে ১০ দিন আগে বেড়াতে এসেছিলেন আজিমা খাতুন (৩০)। তাঁর শ্বশুরবাড়ি পাশের লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে। এত দিন সুস্থই ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল পাতলা পায়খানা শুরু হয়, সঙ্গে বমি। বেলা বাড়ার সঙ্গে অবস্থারও অবনতি হতে শুরু করে। পরে পরিবারের লোকজন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। দুপুর নাগাদ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়।

এ রকম অনেক রোগীই এখন নোয়াখালীর উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচর, হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। তুলনামূলকভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি সুবর্ণচরে। সেখানে গত আট দিনে (১-৮ জুন) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৩৮ জন। মারা গেছেন একজন। সর্বশেষ গতকাল ১৫ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। এ ছাড়া এপ্রিল ও মে মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৭৭৯ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে, পুরো জেলায় গত আট দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৬০৬ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন চারজন। এর আগের দুই মাসে (এপ্রিল ও মে) জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৭৭১ জন। মারা গেছেন ১৪ জন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পুকুরের পানিও দূষিত হয়ে পড়েছে। এসব পানি ব্যবহারের ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আক্রান্তের হার ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন চিকিৎসকেরা।

আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের কারও কারও নলকূপের পানিতে লবণাক্ততা রয়েছে। স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের ভাষ্য, পরীক্ষার আগে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে না।

সুবর্ণচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন চর বাগ্গা এলাকার ছয় বছরের শিশু মো. জাহেরের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, চার-পাঁচ দিন ধরে তাঁদের বাড়িতে ডায়রিয়া। তাঁর দুই ছেলে ছাড়াও পাশের ঘরের আরও তিন শিশু আক্রান্ত। তাঁরা পুকুরের পানি ব্যবহার করেন। পান করেন নলকূপের পানি। তবে নলকূপের পানিতে কয়েক মাস ধরে লবণের হালকা ভাব রয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ডায়রিয়া রোগীদের যে ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে তীব্র দুর্গন্ধ। রোগীদের বিছানাপত্রের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। ওয়ার্ডে শয্যা সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ নার্স আয়েশা সিদ্দিকা প্রথম আলোকে বলেন, দুই মাস ধরে ডায়রিয়া রোগীর চাপ। নার্স ও আয়ার সংকট হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক গোপী নাথ দাশ বলেন, টানা খরার কারণে পুকুরের পানি তলানিতে নেমে গেছে। এতে যেটুকু পানি ছিল, তা–ও নোংরা। তা ছাড়া আক্রান্ত রোগীর কাপড়চোপড় পুকুরে ধোয়ার কারণেও নতুন করে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শায়লা সুলতানা বলেন, সুবর্ণচরে ডায়রিয়া আক্রান্তের হার কমছে না। রোগীদের জন্য সরবরাহ করা অ্যান্টিবায়োটিকের মজুতও শেষ হয়ে এসেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। অনুদান পাওয়া দেড় লাখ টাকা দিয়ে কলেরা স্যালাইন সংগ্রহ করা হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. সেলিম জানান, এপ্রিল ও মে মাসে তাঁর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫৮৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হন। গতকাল ২৫ জন ভর্তি ছিলেন।

পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা দরকার বলে মনে করেন নোয়াখালী জেলা সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের চিকিৎসক সোহেল সারওয়ার। তিনি বলেন, সাধারণত এ সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বাড়ে। কিন্তু এবার অস্বাভাবিক। শিশুদের পাশাপাশি অন্য বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন সমানে।