Thank you for trying Sticky AMP!!

বগুড়ায় ডায়ালাইসিসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় অন্তত ছয় মাস

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা পেতে নতুন রোগীদের ছয় থেকে সাত মাস অপেক্ষা করতে হয়।

দুটি কিডনি অকার্যকর হওয়ায় গত বছরের ৬ জুন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে যান শফিকুল ইসলাম। আবেদন গ্রহণ করে তাঁকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। দিন দশেক আগে হাসপাতাল থেকে ডাক পড়ে ৭৬৭ নম্বর সিরিয়ালে থাকা শফিকুলের। কিন্তু ডাক পড়লেও তিনি সেখানে ডায়ালাইসিস করাতে পারছেন না। কারণ, পরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি হেপাটাইসিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। হাসপাতালটিতে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের ডায়ালাইসিসের আলাদা ব্যবস্থা নেই।

এমন পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচাতে প্রতি সপ্তাহে তিন দিন করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডায়ালাইসিস সেবার জন্য ছুটতে হচ্ছে শফিকুলকে। আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ প্রতি মাসে তাঁকে গুনতে হচ্ছে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। অথচ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিবার ডায়ালাইসিসে খরচ হয় মাত্র ৪৭০ টাকা।

নদীভাঙনে সব হারিয়ে শেরপুর উপজেলার দশমাইল এলাকায় পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছেন হতদরিদ্র শফিকুল। তাঁর মতো দরিদ্র কিডনি রোগীর পরিবার ডায়ালাইসিস সেবার টাকা জোগাতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। টাকার অভাবে মাঝপথেই অনেকে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হচ্ছে কারও কারও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগে কিডনি রোগীর চাপ বেড়েছে। এই চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। সপ্তাহে ছয় দিন দুই পালায় ডায়ালাইসিস কার্যক্রম চালু রেখেও চাপ সামলানো যাচ্ছে না। হাসপাতালে সেবা পেতে নতুন রোগীদের ছয় থেকে সাত মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে। জনবলসংকটে ডায়ালাইসিস ইউনিটে রাতের পালা চালু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন।

হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট নেফ্রোলজি বিভাগে ডায়ালাইসিস ইউনিট চালু হয়। শুরুতে ডায়ালাইসিস ইউনিটে যন্ত্র ছিল মাত্র ২টি। এখন ইউনিটে ডায়ালাইসিস যন্ত্র ২০টি। এর মধ্যে ২টি কোভিড ইউনিটে এবং অন্যটি আইসিইউতে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাকি ১৭টি যন্ত্র চালু আছে নেফ্রোলজি বিভাগের ডায়ালাইসিস ইউনিটে। এখন শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন দুই পালায় ৩২ জন রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।

রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস করাতে ফি দিতে হয় ৪৭০ টাকা। বেসরকারি পর্যায়ে একবার ডায়ালাইসিস নিতে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা লাগে। বগুড়ায় বেসরকারি তিনটি প্রতিষ্ঠানে এই সুবিধা পাওয়া যায়।

বগুড়া সদরের ছিলিমপুর এলাকার চাঁদ সুলতানা বলেন, কিডনি অকেজো হওয়ার পর চিকিৎসকেরা ডায়ালাইসিস নেওয়ার কথা বলেন। বেসরকারি কেন্দ্র থেকে ডায়ালাইসিস নিতে গিয়ে তাঁর পরিবার এখন নিঃস্ব। চিকিৎসার খরচ জোগাতে জায়গাজমিসহ সংসারের সবকিছু বিক্রি করতে হয়েছে। হাসপাতালে আবেদন দেওয়ার ছয় মাস পর ডায়ালাইসিস ইউনিট থেকে ডাক পড়ে তাঁর।

নেফ্রোলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কিডনি বিকল হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালাইসিস নিয়ে বেঁচে আছেন, এমন রোগীর সংখ্যা রয়েছে ৭৪। নিয়ম অনুযায়ী, মৃত্যুজনিত কারণ বা কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া এই রোগীদের বাধ্যতামূলক নিয়মিত ডায়ালাইসিস সেবা দিতে হচ্ছে। এর বাইরে ২০ শয্যাবিশিষ্ট নেফ্রোলজি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকছে। ভর্তি রোগীর মধ্যে প্রতিদিন ১০ জনকে ডায়ালাইসিস সেবা দিতে হচ্ছে। গড়ে প্রতি মাসে ১৯২টি ডায়ালাইসিস দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। এতে কিডনি বিকল নিয়ে নতুন রোগী এলেও অপেক্ষমাণ রাখতে হচ্ছে। একজন রোগীকে আবেদন দিয়ে গড়ে ছয় মাস সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৯ হাজার ৯১৬টি ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ডায়ালাইসিসের জন্য ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদন পড়েছে ৯৩৯টি। এর মধ্যে ৭৭১ ক্রমিকের রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি রোগীরা অপেক্ষমাণ রয়েছেন।

হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক আ ন ম এহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ডায়ালাইসিস সেবা নিতে আসা রোগীর অতিরিক্ত চাপ সামলাতে রাতের পালায় সেবাদান চালু করা প্রয়োজন। কিন্তু তা চালানোর মতো জনবল নেই। তিনি বলেন, হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হয়। কিন্তু জায়গার অভাবে তাঁরা সেই ব্যবস্থা এখনো করতে পারেননি।

কিডনি বিভাগে একজন করে সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক, একজন করে রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার এবং পাঁচজন কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ রয়েছে। সহযোগী অধ্যাপক ও রেজিস্ট্রারের পদ ছাড়া বাকি সব পদ শূন্য। মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা এবং ইন্টার্ন চিকিৎসক নিয়ে চলছে বিভাগের কার্যক্রম। পদ সৃষ্টি ও শূন্য পদে জনবল চেয়ে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমাধান মেলেনি।

হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, সদিচ্ছা থাকার পরও রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। একটি প্রকল্পের আওতায় কিডনি রোগীদের জন্য ৫০ শয্যার ইউনিট চালুর কার্যক্রম চলছে। তবে জনবলসংকটের সমাধান না হলে ডায়ালাইসিস ইউনিটে শয্যা বৃদ্ধি করেও রোগীর দুর্ভোগ কমবে না।