Thank you for trying Sticky AMP!!

ডেঙ্গু পরিস্থিতি: খুলনা বিভাগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে

খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। আগে এই অঞ্চলে হাতে-গোনা দু-একজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলেও তারা ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়েছিল। এবারই প্রথম ঢাকায় না গিয়েও স্থানীয়ভাবে অনেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।

বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে এবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যশোরে, এরপর খুলনার অবস্থান। তবে বিভাগের মধ্যে তুলনামূলক রোগীর সংখ্যা কম চুয়াডাঙ্গায়। এদিকে বিভাগের ১০ জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা রোগীদের হাসপাতাল ছাড়ার হার এখন পর্যন্ত গড়ে প্রায় ৮১ শতাংশ।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, খুলনায় জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। ওই মাসের মাঝামাঝি থেকে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তখন থেকেই দু-একজন করে স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। কুষ্টিয়া থেকে প্রথম স্থানীয়ভাবে আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। এখন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ার হার কিছুটা বাড়লেও প্রতিদিন রোগী ভর্তি চলছেই।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নতুন করে আরও ১৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে এ বিভাগের ১০ জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৫১ জনে। গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ৫০৪ জন। এসব রোগীর মধ্যে ২ হাজার ৮৮২ জন সরকারি ও ২৬৯ জন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর ২ হাজার ৫৪৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে। ৯৮ জনকে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও যশোরে শনাক্ত হওয়া রোগী সরকারি-বেসরকারি উভয় হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়েছে। বাকি ৬ জেলায় শনাক্ত রোগীরা শুধু সরকারি হাসপাতালেই ভর্তি হয়।

সূত্র আরও জানায়, ১ জুলাই থেকে ২২ আগস্ট বেলা ১১টা পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ৩ হাজার ১৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যশোরে ৮২২, খুলনায় ৬৪৯, বাগেরহাটে ১৩৩, সাতক্ষীরায় ২৯২, ঝিনাইদহে ২০৫, মাগুরায় ১৭৬, নড়াইলে ২০৭, কুষ্টিয়ায় ৪৭৭, চুয়াডাঙ্গায় ৮৭ ও মেহেরপুরে ১০৩ জন শনাক্ত হয়েছে।

খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সহকারী পরিচালক ফেরদৌসী আক্তার জানান, মোট আক্রান্তের মধ্যে বর্তমানে খুলনায় ৯৫, বাগেরহাটে ১৭, সাতক্ষীরায় ৫২, যশোরে ১৭৭, ঝিনাইদহে ২৯, মাগুরায় ২৪, নড়াইলে ২৯, কুষ্টিয়ায় ৭০, চুয়াডাঙ্গায় ৪ ও মেহেরপুরে ৭ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তিনি জানান, খুলনা বিভাগে নতুন ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে খুলনায় ২২, বাগেরহাটে ৫, সাতক্ষীরায় ১৬, যশোরে ৫৪, ঝিনাইদহে ৬, মাগুরায় ৪, নড়াইলে ১৮, কুষ্টিয়ায় ২৯, চুয়াডাঙ্গায় ২ ও মেহেরপুরে ২ জন রয়েছে।

খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সৈয়দ জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এ বছরের আগে খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ঢাকায় না গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। এবার প্রথম ঢাকায় না গিয়েও আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে।

বর্তমানের বিভাগের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, এ কথা মোটেই বলা যায় না। কোনো দিন কম আবার কোনো দিন একটু বেশি ভর্তি হচ্ছে। টানা দুই সপ্তাহ ধরে যদি ক্রমাগত রোগী কমতে থাকে, তবে বলা যেত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বছর ধরে এডিস মশার বিরুদ্ধে পরিচ্ছন্নতা অভিযানের সময় এসেছে।

খুলনা বিভাগের কোনো জেলাতেই ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কীটের সংকট নেই। খুলনায় ১ হাজার ২৪৭টি, বাগেরহাটে ৭০৩, সাতক্ষীরায় ৩৪৮, যশোরে ৪ হাজার ৩৭৯, ঝিনাইদহে ৬৭৪, মাগুরায় ৫৯৩,নড়াইলে ১৪৪, কুষ্টিয়ায় ২১৩, চুয়াডাঙ্গায় ১ হাজার ৫০৮ এবং মেহেরপুরে ১৮৬টি কীট গতকাল পর্যন্ত মজুত ছিল।

খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৬৪৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বা নিচ্ছে। রোগীদের মধ্যে ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৫৫৪ জন। খুলনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে পাঁচজন। তাদের মধ্যে দুজন খুলনায় স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ার হার প্রায় ৮৬ শতাংশ।

ডেপুটি সিভিল সার্জন মো. আতিয়ার রহমান শেখ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বিকেলে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের আগের ২৪ ঘণ্টায় খুলনায় নতুন করে ২২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আগের দিন ছিল ৩৪ জন। নতুনদের মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১ জন ও ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন করে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে।

তিনি জানান, জেলায় বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৯৫ জনের মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ৮৩, খুলনা জেনারেল (সদর) হাসপাতালে ৪, বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন এবং গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ও আদদ্বীন হাসপাতালে ২ জন এবং রূপসা, ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জন করে ও তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন রোগী চিকিৎসাধীন।