Thank you for trying Sticky AMP!!

তথ্য গোপন করে অবসরে, উপাচার্যকে উকিল নোটিশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তথ্য গোপন করে নিজ বিভাগ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের কারণে উপাচার্য এম আবদুস সোবহানকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে, অবসর ভাতার টাকা এককালীন পেতে ২০১৭ সালের ২১ জুন তিনি এভাবে পদত্যাগ করেছেন। এতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৭৩ লঙ্ঘন হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ওই বছরের ৯ জানুয়ারি জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ওই বছরের ১ জুলাই থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণকারীরা পেনশনের প্রাপ্য অংশের ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলক সমর্পণ করে বাকি অংশ মাসিক হারে প্রাপ্য হবেন। পেনশনের ওই টাকা এককালীন পেতে ১ জুলাইয়ের আগে তিনি তথ্য গোপন করে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন।

গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র সালমান ফিরোজ ফয়সালের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।

নোটিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে উপাচার্যকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করার অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষক এম আবদুস সোবহান ২০১৭ সালের ৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান এবং ওই দিনেই যোগদান করেন। এরপর ২১ জুন সকালে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের অনুমতি ছাড়াই তিনি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ওই দিন বিকেলেই তিনি বিভাগ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। ওই দিনের জন্য তিনি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. আখতার ফারুককে উপাচার্যের দায়িত্ব দেন। নোটিশে বলা হয়েছে, এভাবে অবসর নেওয়ার মাধ্যমে তিনি ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৭৩’ লঙ্ঘন করেছেন এবং প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন।

আবদুস সোবহানের অবসর গ্রহণের বিষয়টি ২৫ জুলাই সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় অনুমোদিত হয়। নোটিশে আরও বলা হয়েছে, সুবিধামতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে উপাচার্য বেআইনিভাবে ওই বিশেষ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

এদিকে ২১ জুন বিভাগের শিক্ষকতা পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করার পর উপাচার্য ২৪ জুন রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠান। তাতে তিনি ২৯ জুন থেকে অবসর গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। তবে চিঠিতে তিনি ২১ জুনের স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের বিষয়টি গোপন রাখেন। এই অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে আচার্য ও রাষ্ট্রপতি তাঁকে ২৯ জুন থেকে অবসর–পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার অনুমতি দেন।

এরপর ২০ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের নোটিশে আচার্যের প্রদত্ত অনুমতির বিষয়টি জানানো হয়। নোটিশে ডিন আখতার ফারুককে ২৯ জুন উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালনের বিষয়েও সম্মতি জানানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আখতার ফারুক কেবল ২১ জুন ওই দায়িত্ব পালন করেন।

ওই বছরের ৩১ অক্টোবর সিন্ডিকেটের ৪৭৩তম সভায় উপাচার্য নিজের সভাপতিত্বে তাঁর ভবিষ্য–তহবিলে জমা করা অর্থ সুদসহ উত্তোলন করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে অবসর ভাতার ৮০ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬৯ টাকা উত্তোলন করেন।

উপাচার্য এম আবদুস সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বহাল রয়েছেন। তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য বেআইনি ও অনৈতিক কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা হারিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিবন্ধিত ডাকযোগে এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।