Thank you for trying Sticky AMP!!

তারাগঞ্জে তিনটি সেতু ভেঙে যাওয়ায় ৪০ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ডাঙ্গীরহাট-নেকিরহাট রাস্তার খারুভাজ নদের ওপর নির্মিত নেকিরহাট সেতুটির এক পাশে ভেঙে এভাবে ধসে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে ২১টি গ্রামের মানুষ

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় বন্যায় তিনটি সেতু ভেঙে যাওয়ায় ওই সেতুর ওপর দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ৪০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। কৃষকেরা উৎপাদিত ফসল সহজে বাজারজাত করতে পারছেন না।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, উপজেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের অবস্থান। আগে ওই ইউনিয়নের মানুষ ৩৮ কিলোমিটার ঘুরে রংপুর শহরে যেত। ওই ইউনিয়নের সঙ্গে রংপুর শহরের যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৬ সালে খারুভাজ নদের ওপর নেকিরহাট সেতুটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নেকিরহাট বাজারের কাছে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থ একটি সেতু নির্মাণ করে উপজেলা পরিষদ। এই সেতু পেরিয়ে ১০ কিলোমিটার গেলেই রংপুর শহর।

তারাগঞ্জের আলমপুর ইউনিয়নের নেংটিছেড়া খালের ওপর চকতাহীরা সেতুটি ভেঙে পড়ায় ১২টি গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে

ওই সেতুর ওপর দিয়ে রিকশা-ভ্যান, ইজিবাইক, ট্রাক-ট্রলি, মাইক্রোবাস ছাড়া নেকিরহাট, নদীরপাড়, খারুভাজ, মমিনপুর, চানকুঠি, মুন্সিরহাট, নজিরেরহাট, বানিয়াপাড়া, বাছুরবান্দা, শাওনাপাড়া, খারুয়াবাদ, শাহপাড়া, তেলিপাড়া, জুম্মাপাড়া, উত্তরপাড়া, ডাঙ্গীরহাট, খারুভাজ, পাতাইপাড়াসহ ২১টি গ্রামের ২৩ হাজারের বেশি মানুষ চলাচল করে। গত বছরের ৩০ মার্চ পানির স্রোতে সেতুটি ভেঙে পড়ায় স্থানীয় লোকজনকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। তাদের এখন অতিরিক্ত পথ ঘুরে রংপুর শহর ও উপজেলা সদরে যেতে হচ্ছে।
আজ শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটির ওপর দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ আছে। পশ্চিম দিকের অংশ ভেঙে দেবে গেছে। পিলারগুলোতে ফাটল ধরেছে। ঝুঁকি নিয়ে লোকজন পাঁয়ে হেটে সেতু পারাপার হচ্ছে।
সেতুর পাশেই আমন ধানের আগাছা পরিষ্কার করছেন নেকিরহাট গ্রামের জুলহাস মিয়া। তিনি বলেন, ‘সরকার কত কিছু করেছে। খালি হামার এই সেতু কোনায় ঠিক করি দেওছে না। সেতু কোনা ঠিক না করায় দেড় বছর থাকি হামাক কষ্ট ভোগ করবার নাগোছে। ফসলেরও ভালো দাম পাওছি না।’

তারাগঞ্জের ডাঙ্গীরহাট-কোরানীপাড়া রাস্তার কোরানীপাড়া বাজারের সামনে ২০ বছর আগে নির্মিত সেতুটির এক দিকের প্রতিরক্ষাদেয়াল বন্যায় ভেঙে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় লোকজন

এ ব্যাপারে হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, সেতুটি সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা সমন্বয় কমিটিতে আলোচনাও হয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায়ও এ বিষয়ে খবর ছাপা হয়েছে। এরপরও সেতুটি সংস্কার বা নতুন সেতু নির্মাণ না করায় এলাকার বাসিন্দারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষকেরা ভোগান্তিতে পড়েছেন বেশি। অতিরিক্ত পথ ঘুরে তাঁদের কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে হচ্ছে। এতে ব্যয় বাড়ছে।
এদিকে ১৯৯৮ সালে উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের নেংটিছেড়া খালের ওপর চকতাহীরা সেতুটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে চকলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে ২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ মিটার প্রস্থ সেতুটি নির্মাণ করে উপজেলা পরিষদ। গত ২০ জুলাই পানির স্রোতে সেতুটি ভেঙে খালে পড়ে যায়। ওই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণ না করায় চকতাহীরা, ভীমপুর, দরজিপাড়া, চাকলা, খিয়ারপাড়া, সেনপাড়া, পাইকপাড়া, কবজিপাড়া, চিকলী, শাওনাপাড়া, ধোলাইঘাট ও তেতুলতোলা—এই ১২ গ্রামের ২০ হাজারের বেশি মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

চাকলা গ্রামের আমিনুর ইসলাম বলেন, ‘দলে দলে লোকজন আইসোছে। হামার দুঃখ–দুর্দশা দেখি যাওছে। সাংবাদিকেরাও ছবি তুলি পেপারোত দেওছে, কিন্তু সেতু কোনা তো ঠিক হওছে না। একনা ঠিক না করায় হামরা ধান, পাট, সবজি, তামাক, আলু ট্রাক-ট্রলিত করি শহরোত নিগার পাওছি না। কম দামোত গ্রামোত বেচপার নাগোছে।’
এ ছাড়া ডাঙ্গীরহাট-কোরানীপাড়া রাস্তার কোরানীপাড়া বাজারের সামনে ২০ বছর আগে নির্মিত সেতুটির এক দিকের প্রতিরক্ষাদেয়াল বন্যায় ভেঙে পড়েছে। এরপর থেকে ওই সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে মেনানগর, কোরানীপাড়া, নয়ামাদ্রাসা, কুঠিয়ালপাড়া, হাজীপাড়া, মুন্সিপাড়া ও বানিয়াপাড়া—এই সাত গ্রামের প্রায় সাত হাজার মানুষ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী হায়দার জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ভাঙা সেতু তিনটির বিষয় জানা আছে। নতুন সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই সেতু নির্মাণের বরাদ্দ পাওয়া যাবে।’