Thank you for trying Sticky AMP!!

তিনটি বিষয় ধরে তদন্ত, কারণ এখনো অজানা

গত এক সপ্তাহে মোট আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে শিক্ষকের ঘনিষ্ঠজনেরা আছেন।

বগুড়ায় চলন্ত অটোরিকশা থামিয়ে প্রকাশ্যে মাদ্রাসাশিক্ষককে গুলি করে হত্যার কারণ এখনো জানা যায়নি। গত এক সপ্তাহে আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে নেমে এখনো শিক্ষক হত্যার বিষয়ে বিশেষ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত করছেন বগুড়া শহরের কাইগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সৈকত হাসান। গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রহস্য উদ্‌ঘাটনে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। মূল তদন্তের বাইরেও পুলিশের দলগুলো ছায়া তদন্ত করছে। এ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই শিক্ষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, এমন সাত থেকে আটজনকে পুলিশ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে পরিবারের সদস্য ছাড়াও তাঁর ঘনিষ্ঠ এক অনুচরও আছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। তবে এখনো হত্যাকারীদের পরিচয় ও হত্যার কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নেপথ্যে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত কি না, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

খুব কাছে দাঁড়িয়ে ছয় থেকে সাতটি গুলি করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় হত্যাকারীরা প্রশিক্ষিত ও পেশাদার।
ফয়সাল মাহমুদ, এএসপি, বগুড়া

৪ মে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া কৃষি কলেজসংলগ্ন এলাকায় নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে অস্ত্রের মুখে চলন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশার পথ রোধ করে দুর্বৃত্তরা। তারা অটোরিকশায় থাকা মাদ্রাসাশিক্ষক মোজাফফর হোসেনকে (৫৫) প্রকাশ্যে পরপর ছয়টি গুলি করে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। এ সময় অটোরিকশায় আরও যাত্রী ছিলেন।

মোজাফফর হোসেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের সুকাশ নওদাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০ বছর আগে বগুড়া শহরে আসেন। দ্বিতীয় স্ত্রী মাহফুজা আকতারকে নিয়ে শহরের কারবালা এলাকায় থাকতেন। নিশিন্দারা এলাকার দারুল হেদায়া কওমি হাফেজিয়া মাদ্রাসার পরিচালক ছিলেন তিনি। প্রথম স্ত্রী আসমা বেগম থাকেন গ্রামের বাড়িতে।

মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি জিন-ভূত তাড়ানো, ভাগ্যগণনা করে ভবিষ্যৎ বলে দেওয়ার কাজও করতেন মোজাফফর। পারিবারিক কাজে গত ২৮ এপ্রিল বগুড়া শহর থেকে নাটোরের সিংড়ায় গ্রামের বাড়িতে যান তিনি। সেখানে এক সপ্তাহ থাকার পর ৪ মে বগুড়ায় ফেরার পথে হত্যার শিকার হন।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোজাফফরের ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সৈকত হাসান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের পেছনে তিনটি বিষয়কে কারণ হিসেবে ধরে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও পেশাগত কোনো বিরোধের জেরে তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন কি না, তা দেখা হচ্ছে। তদন্তে এখন পর্যন্ত পেশাগত কারণটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

সৈকত হাসান আরও বলেন, মোজাফফর মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি মানুষের ভাগ্য গণনা করে ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া, জিন-ভূত ছাড়ানোর মতো যেসব কাজ করতেন, তাতে কারও জিঘাংসার শিকার হতে পারেন। এ ছাড়া জঙ্গিদের হামলার শিকার হয়েছেন কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হত্যাকারীরা আগে থেকেই ঘটনাস্থলে ওত পেতে ছিল। তারা জানত, মোজাফফর কোন বাহনে করে বগুড়ায় ফিরছেন। অর্থাৎ মোজাফফরের গতিবিধি অনুসরণ করে কেউ আগে থেকেই হত্যাকারীদের কাছে তথ্য দিয়েছিল।

বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ফয়সাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়ায় গত দুই-তিন বছরে কোনো হত্যাকাণ্ডে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়নি। শিক্ষককে হত্যার সময় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। খুব কাছে দাঁড়িয়ে ছয় থেকে সাতটি গুলি করা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় হত্যাকারীরা প্রশিক্ষিত ও পেশাদার।