Thank you for trying Sticky AMP!!

দরিদ্র-আহত-প্রতিবন্ধীদের ভাড়া নেন না তাঁরা

মানুষ মানুষের জন্য—এই প্রতিবেদন যাদের নিয়ে তাঁরা এই কথাটির মর্ম বোঝেন এবং সে অনুযায়ী কাজও করেন। তাঁরা মানুষের প্রয়োজনে প্রস্তুত থাকেন সব সময়। ঢাকা, খিলক্ষেত, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের ছয় সিএনজিচালক ভাড়ায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি দরিদ্র রোগী, আহত ব্যক্তি এবং প্রতিবন্ধীদের বিনা মূল্যে সেবা দিচ্ছেন। তাঁদের অটোরিকশায় করে অসহায় মানুষ শুধু বিনা মূল্যে যাতায়াত করতে পারছেন তা নয়, বিনা মূল্যে ওষুধও পাচ্ছেন।

দরিদ্র রোগী, আহত ব্যক্তি এবং প্রতিবন্ধীদের বিনা মূল্যে সেবা দিচ্ছেন তাঁরা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা, ৮ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

গতকাল রোববার কথা হলো মানবসেবায় এগিয়ে আসা ছয় ব্যক্তির সঙ্গে। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার তপন চন্দ্র ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৮ সাল থেইকা আমি অসহায়, গরিব ও গর্ভবতী নারীদের আমার গাড়িতে করে বিনা মূল্যে আনা–নেওয়া করছি। বিপদে যারা পড়ে, তাদের পাশে মানুষ দাঁড়াইতে চায় না। তখন আমার মনে হইল, মানুষের পাশে আমি নিজেও তো দাঁড়াইতে পারি। এই চিন্তা থেইকাই কাজ শুরু করি। আমার দেখাদেখি আরও কয়েকজন আসে।’

ছয়টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার গায়ে লেখা রয়েছে, ‘গরিব, অসহায় ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সিএনজি যাতায়াত ফ্রি’। নাম ও ফোন নম্বরও দেওয়া আছে। তাঁরা বিভিন্ন এলাকার হলেও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। তাঁরা সংগঠিত হওয়ার কথাও ভাবছেন। কয়েকজন বিনা মূল্যে সেবার কথা উল্লেখ করে ভিজিটিং কার্ডও করেছেন।

অটোরিকশার গায়ে লেখা রয়েছে, ‘গরিব, অসহায় ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সিএনজি যাতায়াত ফ্রি’। ঢাকা, ৮ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

খিলক্ষেতের মো. আবদুল কাদের বললেন, ‘আমরা অনেক সময় ভাড়ার যাত্রী নামাইয়া অসহায় মানুষকে গাড়িতে তুলি। গত শনিবারও বিনা মূল্যে এক রোগীকে টঙ্গী নিয়ে হাসপাতালে দিয়া আসছি। আমাদের ফোন নম্বর আছে, জরুরিভাবে অসহায় মানুষ বিনা মূল্যে আমাদের সেবা নিতে পারেন।’ আশুলিয়ার মো. আবদুল মালেক যোগ করলেন, ‘আমরা কয়েকজন গাড়িতে ওষুধপত্র রাখি। আর আমরা যাদের সেবা দিই, তাদের নাম–ঠিকানা লিখে রাখি।’

মোবাইলফোনে কথা হলো বাড্ডার শরীফা আক্তারের সঙ্গে। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী। গত বছর তিনি মাথায় আঘাত পেয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সেখান থেকে মহাখালী যেতে বাস খুঁজছিলেন। তখন আবদুল মালেক তাঁকে বিনামূল্যে অটোরিকশায় করে মহাখালী পৌঁছে দেন। তিনি বলেন, ‘বিপদে পড়ে গেছিলাম ভাই। মালেক ভাই থাকায় বেঁচে গেছি। তিনি যত্ন কইরা আমাকে পৌঁছে দিছেন। এমন উপকার কেউ করতে চায় না। তিনি কোনো টাকাও নিলেন না।’

আজীবন তাঁরা মানবসেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখতে চান। ঢাকা, ৮ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

গাজীপুরের মো. ফোরকান মিয়া তাঁর সেবার নাম রেখেছেন, ‘ফোরকান মিয়ার ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস’। তিনি জানান, ২০১১ সালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। তখনই তাঁর মনে হয় অসহায় রোগীদের জন্য কিছু করা উচিত। তিনি বলেন, ‘গরিব রোগীরা বাসে কষ্টে করে যায়। টাকার অভাবে সিএনজি লইতে পারে না। তাদের জন্য আমি বিনা মূল্যে সেবা দিই।’

সাভারের মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘সবার অটোরিকশায় দান বাক্স রয়েছে। যাত্রীরা চাইলে সেখানে দান করতে পারেন। সেই টাকা আমরা অসহায় রোগীদের চিকিৎসায় ব্যয় করি।’