Thank you for trying Sticky AMP!!

দিনাজপুরে লকডাউন কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের প্রধান প্রবেশমুখে দেওয়া হয়েছে বাঁশের ব্যারিকেড। স্বাস্থ্যবিধির কথা হ্যান্ডমাইকে প্রচার করছেন এক নারী স্বেচ্ছাসেবক। ১৭ জুন বিকেলে দিনাজপুর শহরের সরকারি কলেজ মোড় এলাকায়

দিনাজপুরে লকডাউনের তৃতীয় দিনে গলির মুখে বাঁশের ব্যারিকেড

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দিনাজপুরে চলছে কঠোর লকডাউন। আজ বৃহস্পতিবার ছিল এর তৃতীয় দিন। লকডাউনের মধ্যেও করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। শহরজুড়ে ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলে ঠুনকো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছেন মানুষ। এমন অবস্থায় শহরে প্রবেশের প্রধান প্রধান গলিমুখে আজ থেকে বাঁশের ব্যারিকেড দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি।

বিকেল সাড়ে চারটায় এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। যদিও গত রোববার সন্ধ্যায় করোনা প্রতিরোধ কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, লকডাউনের প্রথম দিনেই প্রধান প্রধান গলিমুখে বাঁশের ব্যারিকেড দেওয়া হবে।

আজ শহর ঘুরে দেখা যায়, শহরের প্রধান পাঁচটি প্রবেশমুখ সরকারি কলেজ মোড়, মহারাজার মোড়, কাঞ্চন মোড়, ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড ও পুলহাট কসবা এলাকায় বাঁশের ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। পুলিশ, আনসার ও বিজিবি সদস্যরা বসিয়েছেন তল্লাশিচৌকি। তবে উপজেলা শহরের বাইরে থেকে জরুরি প্রয়োজনে আসা ইজিবাইকের যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হেঁটেই গন্তব্যে ছুটছেন মানুষ।

প্রশাসন থেকে আজ কলেজ মোড়, মহারাজার মোড় ও ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের প্রবেশমুখে বাঁশের ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে।

শহরের সরকারি কলেজ মোড় এলাকা থেকে ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে শহরে ঢোকার গলিমুখ রয়েছে ১২টি। যেকোনো যানবাহন যাত্রী বা মালামালসহ এসব পথ ব্যবহার করে শহরে প্রবেশ করে। প্রশাসন থেকে আজ কলেজ মোড়, মহারাজার মোড় ও ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের প্রবেশমুখে বাঁশের ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। ফলে বিকল্প গলিমুখ দিয়ে ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল প্রবেশ করছে শহরে।

শহরের প্রবেশমুখগুলোতে দেওয়া হয়েছে বাঁশের ব্যারিকেড। তবুও ইজিবাইকে করে উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে মানুষ। ইজিবাইক থেকে নেমে হেঁটে ঢুকে পড়ছেন শহরে। ১৭ জুন বিকেলে মহারাজার মোড়ে

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দোকান ব্যতীত অন্য সব দোকান খোলার অনুমতি না থাকলেও শহর ঘুরে দেখা গেছে, বাহাদুর বাজার, মুন্সিপাড়া, লিলির মোড়ে কিছু দোকান অর্ধেক শাটার খোলা রেখে পণ্য বিক্রি করছে। পুলিশ কিংবা প্রশাসন আসামাত্রই বন্ধ করে দিচ্ছে। অনেকে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকছেন। ক্রেতা এলে চটজলদি পণ্য বিক্রি করছেন আবার বন্ধ করে দিচ্ছেন।

শহরের মডার্ন মোড় এলাকায় মো. সুজন নামের এক পথচারী বলেন, ‘মানুষের দোষ কী? দোকানগিলা যদি একেবারেই বন্ধ থাকে, তাইলে তো মানুষ শহরত ঢুকির পারোছে নাই। তা ছাড়া কয়েকটি জায়গায় ব্যারিকেড দিলি হবি? সব গলি বন্ধ করিবা হবি।’

উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ ইজিবাইকে এসে পরে হেঁটে ঢুকে পড়ছেন শহরে। ১৭ জুন বিকেলে সরকারি কলেজ মোড়ে

জেলা পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত দুই দিন আমরা পর্যবেক্ষণ করলাম। শহরে মানুষের অহেতুক চলাফেরা কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। শহরের প্রধান গলিমুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে ছোট ছোট গলিমুখগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। প্রশাসন একই সঙ্গে সব জায়গায় তো আর চোখ রাখতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিসচেতনতা জরুরি।’ এ সময় জনপ্রতিনিধি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদেরও স্থানীয়ভাবে লকডাউন কর্মসূচি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে আজ সন্ধ্যায় পাওয়া সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, ৯৩২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৫৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। এর মধ্যে সদর উপজেলায় শনাক্ত হয়েছেন ২৫৩ জন। আজ জেলায় করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন তিনজন। তিনজনই সদর উপজেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৭। মৃত ব্যক্তিদের ৭৪ জনই সদর উপজেলার। জেলায় বর্তমানে করোনা রোগী ৮৪৫ জন, যার ৫৭৪ জনই লকডাউন–ঘোষিত সদর উপজেলার। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮১ জন। পূর্বে শুধু এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি থাকলেও গতকাল বুধবার রোগী বেড়ে যাওয়ায় প্রথম দুজন রোগীকে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।