Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই প্রকল্পের আওতায় কাটা হচ্ছে ৬০০ সড়ক তীব্র ভোগান্তি

পানির পাইপ বসাতে চট্টগ্রাম নগরের হাজী নূর আহমদ সড়কের একটি অংশ অন্তত আটবার খোঁড়ে ওয়াসা। আবার উন্নয়নকাজ শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই সিডিএ অ্যাভিনিউয়ের শুলকবহর অংশ কেটে পাইপ স্থাপনের কাজ চলে। কার্পেটিং করার আগমুহূর্তে কাটতে হয় পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোড।

চট্টগ্রাম নগরের সড়কগুলোতে এভাবে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ ওয়াসার বোর্ড সদস্যরা। গত ২৪ এপ্রিল বোর্ড সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এর কারণও জানতে চান তাঁরা।

নগরের পানি সরবরাহ বাড়ানোর জন্য ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প-২’ এবং ‘চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নীতকরণ ও স্যানিটেশন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে। এই দুটি প্রকল্পের আওতায় নগরের সাড়ে ছয় শ কিলোমিটার সড়ক কাটছে ওয়াসা। ৬০০–এর বেশি সড়ক ধাপে ধাপে কাটা হচ্ছে। নগরে মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১০৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে পিচঢালা সড়ক রয়েছে ১ হাজার ১৯৭টি, যার মোট দৈর্ঘ্য ৭৪৪ কিলোমিটার।

এ ক্ষেত্রে সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ওয়াসার সমন্বয় না থাকার অভিযোগ রয়েছে। বারবার কাটার কারণে সংস্কার করা সড়ক দ্রুত নষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তবে তা অস্বীকার করেছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ।

ওয়াসার তালিকা অনুযায়ী, পানির পাইপ বসাতে এবার নগরের ছোট-বড় প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়ক খুঁড়তে হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে নগরের সিডিএ অ্যাভিনিউ, জুবিলী রোড, মোমিন রোড, কে সি দে সড়ক, এম এম আলী সড়ক, শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ সড়ক, বাদশা মিঞা সড়ক, জাকির হোসেন সড়ক, চট্টেশ্বরী সড়ক, কলেজ সড়ক, কাপাসগোলা সড়ক, কে বি ফজলুল কাদের সড়ক, ডিটি রোড, জামাল খান সড়ক, পোর্ট কানেকটিং রোড, শেখ মুজিব সড়ক। এর মধ্যে অনেক সড়ক গত পাঁচ বছরে একাধিকবার কাটা হয়। এদিকে কাটা সড়কগুলো সাময়িকভাবে সংস্কার করা হলেও বৃষ্টি ও যানবাহনের চাপে সেখানে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়ে যায়। ফলে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।

সংস্কারের পর খোঁড়াখুঁড়ি

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি ও উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের জন্য গত বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত খানাখন্দে ভরা ছিল সিডিএ অ্যাভিনিউ। গত বছরের শেষের দিকে সড়ক সংস্কার করা হয়। গত মার্চে সড়কের শুলকবহর অংশে আবার খোঁড়ে ওয়াসা। একই এলাকার আবদুল্লাহ খান সড়কের সংস্কারকাজ শেষ হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। মার্চে ওই সড়ক কেটে পাইপলাইন বসায় ওয়াসা।

সম্প্রতি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের প্রবর্তক মোড় থেকে ২ নম্বর গেট অংশ সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু ঈদের আগে সড়কের এক পাশ কাটা হয় পাইপ বসানোর জন্য। যা এখনো সংস্কার করা হয়নি।

সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নগরের পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোড ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ চলাকালেই কেটে ফেলে ওয়াসা। সংস্কারকাজের কিছুদিন পরেই কাটা হয়েছে কবি কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক, লাভ লেইন, বৌদ্ধমন্দির সড়ক। এখন এসব সড়ক আবার সংস্কার করতে হবে।

সরেজমিন

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সাড়ে তিন বছর ধরে নগরের আরাকান সড়কের এক পাশ বন্ধ রয়েছে। চার লেনের সড়কটি এখন দুই লেন ব্যবহার হচ্ছে। গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

নগরের পাঠানিয়া গোদা এলাকার বাসিন্দা মোজাফফর আহমদ বলেন, সড়কের এক পাশ বন্ধ থাকায় যানজটে প্রতিদিন নরকযন্ত্রণা সইতে হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে ধুলা এবং বৃষ্টির সময় কাদার যন্ত্রণায় ভুগতে হয়।

নগরের বায়েজিদ সড়ক, কলেজ রোড, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, কে সি দে সড়ক খোঁড়া হলেও এখনো সংস্কার করা হয়নি।

নগরের রাস্তাগুলো খোঁড়াখুঁড়ির পর ভালোভাবে সংস্কার করা হয় না বলে জানান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদ ওমর ইমাম। তিনি বলেন, আরাকান সড়কের বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়কের এক পাশ তিন-চার বছর ধরে বন্ধ। এ রকম হওয়ার কথা না। এ জন্য ওয়াসাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। আর প্রকল্পের কাজের জন্য কোন সড়কে কত দিন ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলবে এবং কত দিনের মধ্যে সংস্কার করে দেওয়া হবে, তা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মানুষকে জানানো উচিত ওয়াসার। কিন্তু তা করা হয় না।

কর্তৃপক্ষের ভাষ্য

গত ১৫ মে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের মাসিক সভায় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অভিযোগ করেন, নগরজুড়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে করপোরেশনের সঙ্গে ওয়াসার কোনো সমন্বয় নেই। ফলে সিটি করপোরেশন নতুন রাস্তা করে যাওয়ার পর আবার খুঁড়ে রাখে ওয়াসা। এতে রাস্তা নষ্ট হয়।

এই প্রসঙ্গে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসাকে সড়কের খোঁড়াখুঁড়ির ব্যাপারে আরও সতর্ক ও যত্নশীল হতে হবে। মানুষের ভোগান্তি যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। ত্রুটির কারণে এক রাস্তা বারবার কাটতে হয়। এ ধরনের ভুল যাতে না হয়, সে জন্য নিবিড় তদারকি করতে হবে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, কয়েকটি সড়ক হয়তো সংস্কারের পর কাটা হচ্ছে। প্রয়োজনের কারণে কখনো কখনো এক সড়ক কয়েকবার কাটতে হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেয়রের সঙ্গে কথা বলে সড়ক খোঁড়া হচ্ছে। তাঁর দাবি, ওয়াসা সড়ক খোঁড়ার পরেই দ্রুত সংস্কার করে দেয়।