Thank you for trying Sticky AMP!!

দুবলারচরে শেষ হলো রাস উৎসবের পুণ্যস্নান

সুন্দরবনের দুবলারচরে পুণ্যস্নানের আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত পুণ্যার্থীরা

তখনো সূর্য ওঠেনি, তবে ফরসা হতে শুরু করেছে চারদিক। জোয়ারের টানে বাড়তে শুরু করেছে বঙ্গোপসাগরের পানি। এমন সময় নৌযান থেকে নেমে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ছুটতে শুরু করেন সাগরকিনারে। কেউবা দল বেঁধে, আবার কেউবা একা কিনারে বসে শুরু করেন উপাসনা। এরপর সাগরের পানিতে স্নান করে আবার উঠে পড়েন নৌযানে। যাত্রা শুরু করেন বাড়ির পথে। এরই মধ্য দিয়ে শেষ হয় রাস উৎসব।

আজ সোমবার ভোরে সুন্দরবনের দুবলার চরের চিত্র এটি। এর আগে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় পূজা। ওই পূজা ও স্নানে অংশ নিতে হাজার হাজার পুণ্যার্থী জড়ো হন দুবলারচরে। ২৮ নভেম্বর সকালে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনের শেষ সীমানা দুবলারচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তাঁরা। প্রতিবছর রাসপূজাকে ঘিরে দুবলারচরের আলোরকোলে অনুষ্ঠিত হয় মেলা। ঐতিহ্যবাহী ওই মেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অংশ নেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে এবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি মেলা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সাগরের নোনাজলে স্নান করছেন। জোয়ারের লোনাজলে স্নান করলে তাঁদের পাপ মোচন হবে—এমন বিশ্বাস নিয়ে রাস উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন তাঁরা।

করোনার কারণে পুণ্যার্থীরা মুখে মাস্ক ‍ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করছেন। অন্যবার রাস মেলা থাকায় প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ এলেও এবার মেলা বন্ধ থাকায় প্রায় ১৫ হাজার লোক সমাগম হয়েছিল বলে জানান আয়োজকেরা।

খুলনার কয়রা থেকে আসা পুণ্যার্থী তাপন পাল বলেন, ‘রাস উৎসবে এসে লোনাজলে স্নান করলে অতীতের সব পাপ মোচন হয়—এমন বিশ্বাস নিয়ে রাস উৎসবে এসে পুণ্যস্নান করেছি। অতীতের সব পাপ মোচন হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আমি ভালো হয়ে চলব। আমি কিছু মানত করেছি। আশা করি তা পূরণ হবে।’

প্রতিবছর কার্তিক মাসে (খ্রিষ্টীয় নভেম্বর) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাস মেলা এবং পুণ্যস্নানের জন্য দুবলারচর বিখ্যাত। যদিও বলা হয়ে থাকে, ২০০ বছর ধরে এ রাস মেলা হয়ে চলেছে। তবে জানা যায়, ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে হরিচাঁদ ঠাকুরের এক বনবাসী ভক্ত, নাম হরিভজন, এই মেলা চালু করেন। প্রতিবছর অসংখ্য পুণ্যার্থী রাসপূর্ণিমাকে উপলক্ষ করে এখানে সমুদ্রস্নান করতে যান। দুবলারচরে সূর্যোদয় দেখে ভক্তরা সমুদ্রের জলে ফল ভাসিয়ে দেন। কেউবা আবার বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ভজন-কীর্তন গেয়ে মুখরিত করেন চারপাশ।

কারও কারও মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এ উপলক্ষেই দুবলায় পালিত হয়ে আসছে রাস উৎসব।