Thank you for trying Sticky AMP!!

দৃষ্টিহীনতা জয় করে তাদের সাফল্য

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান

জন্মের পরেই ধরা পড়ে মোহাম্মদ আবিদুর রহমানের দৃষ্টিশক্তি কম। ক্রমেই সেই দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে উঠে। কিন্তু সেটি তাঁকে থামাতে পারেনি। তাই বয়স বাড়তেই স্কুলে যাওয়া-আসা শুরু করে সে। কিন্তু চোখে দেখত না বলে পরীক্ষার হলে গিয়ে লিখতে পারত না। ফলে কয়েক বছরের মাথায় বন্ধ যায় পড়ালেখা। ঘরে বসে কান্নাকাটি করে দিন কাটছিল তার।

এর মধ্যেই আবিদুরের এক মামা সন্ধান পান নগরের মুরাদপুরের সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের। এরপর ২০১১ সালে সেখানে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয় তাকে। যেন নতুন জীবন পায়। নিজের চেষ্টা আর শিক্ষকদের সহায়তায় চলতে থাকে পড়াশোনা। সেই অদম্য সংগ্রামের ফল সে পেয়েছে। গতকাল সোমবার এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ–৪ দশমিক ৫৬ পেয়ে পাস করেছে সে। এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায়ও সে এ গ্রেডে পাস করেছিল।

শুধু আবিদুর নয়, শিক্ষা উপকরণ, পরীক্ষাপদ্ধতি, শ্রুতলেখক সমস্যাসহ নানা বাধা ডিঙিয়ে এ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে পরীক্ষা দেওয়া আট দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীই সাফল্যের সঙ্গে পাস করেছে। তাদের মধ্যে এ গ্রেড পেয়ে পাস করেছে ছয়জন। বাকি দুজন এ মাইনাস গ্রেড পেয়ে পাস করেছে। শিক্ষা বোর্ড থেকে পাঠদানের স্বীকৃতি না থাকায় তারা চট্টগ্রাম সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষার্থী হিসেবে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে না। তাই তারা সবাই হামজারবাগ রহমানিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের অধীনে পরীক্ষা দেয়।

নিজের ফলাফলে অনেক খুশি আবিদুর। সে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলে, একসময় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে মন খারাপ হয়েছিল। আজ এসএসসি পাস করতে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে। এখন তার স্বপ্ন আরও বড় লক্ষ্যের দিকে। ভর্তি হতে চায় চট্টগ্রামের কোনো এক সরকারি কলেজে। এরপর এইচএসসি পাস করে যেতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়ে।

গতকাল দুপুরে সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রাবাসে গিয়ে পাওয়া যায় মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানকে। সে ৪ দশমিক ২৮ পেয়ে এবার এসএসসি পাস করেছে। ছাত্রাবাসের অন্যদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসেছিল সে।

হাসানুজ্জামান প্রথম আলোকে বলে, নিজের প্রচেষ্টা, বাবা-মা আর শিক্ষকদের সহযোগিতায় এত দূর আসা সম্ভব হয়েছে। এর পাশাপাশি শ্রুতলেখকদেরও ধন্যবাদ দেয় সে।

এ ছাড়া অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাহি জি চৌধুরী জিপিএ–৪ দশমিক ৩৯, আনিকা তাবাস্সুম ৪ দশমিক ৪ দশমিক ২২, মেহেরুন্নেসা ৪ দশমিক ০৬, রিফা আক্তার ৪ দশমিক ০০, ফাতেমা আক্তার ৩ দশমিক ৯৪ ও শিল্পী আক্তার ৩ দশমিক ৮৩ পেয়ে পাস করেছে।

শিক্ষার্থীদের সাফল্যে শিক্ষকেরাও খুশি। গতকাল দুপুরে সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওদের সন্তোষজনক ফলাফলে তাঁরা খুশি। যদি আরও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়, তাহলে এই শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে আরও ভালো জায়গায় যাবে।