Thank you for trying Sticky AMP!!

‘দেখিশুনি ভোট দিমো’

রংপুরের তারাগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন জমে উঠেছে। প্রার্থীদের পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে বিভিন্ন সড়ক। ডাংগীরহাট বাজার, হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন, তারাগঞ্জ, রংপুর, ১৮ নভেম্বর

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে। প্রতীক পেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ২৭৯ জন প্রার্থী। ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাইছেন তাঁরা।

২৮ নভেম্বর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন কুর্শা, সয়ার, ইকরচালী, হাড়িয়ারকুঠি ও আলমপুর ইউপিতে নির্বাচন হবে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১২ নভেম্বর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন। পাঁচ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৩০, সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদে ৭১ ও সদস্যপদে ১৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

কয়েকজন প্রার্থীর সমর্থকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রার্থীদের এখন দিনরাত নির্বাচনী প্রচারণার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। ভোরের আগে বিছানায় গেলেও, সকালেই তাঁরা আবার বের হয়ে পড়ছেন।

নদীরপাড় মাঠে ধান কাটতে ব্যস্ত হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের নারায়ণজন গ্রামের ভোটার আবু বক্কর (৬০)। তিনি বলেন, ‘প্রার্থীরা আইনকানুন কিছু মানোছে না। ওমার জন্যে হামার দিন রাইত এখন এক সমান হইচে। এলাকাত সউগ সময় মানুষ। ঘুমবার পাওছি না। রাইতোতও ঘুম থাকি ডাকে ভোট চায়ছে। কদ্দিন যে ভোট যায়।’

বাড়ির উঠানে বসে আছেন ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের গৃহবধূ মিনার বেগম (৫০)। ভোটের খবর কী? জানতেই তিনি বলেন ‘বাবা, এত দিন পড়ি মরলেও মোক কায়ও দেখির আইসে নাই। এ্যালা দিনে রাইতে মোর খোঁজ নেওছে মেম্বার-চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। ঠিকমতো ঘুমবারও পাওছি না। রাইতোত দরজাত আসি ঠোকঠোকাওছে। নিন থাকি ডাকে ভোট চাওছে। ভোট আসি খুব যন্ত্রণায় আছি।’

ইকরচালী ইউনিয়নের মাঝের হাট রাস্তার মোড়ে বসে গল্প করছেন পাঁচজন নারী। ভোট কেমন চলছে জানতেই লক্ষ্মীপুর গ্রামের গৃহবধূ ফুলবানু বেগম (৪০) বলেন, ‘এক প্রার্থী যাবার পর আরেক প্রার্থী আসি দরজা ঠেলোছে। হ্যান্ডশেক করি ভোট চাওছে। বিপদ–আপোদে পাশোত থাকবে। দুঃখ, দুর্দশা ঘুচাইবে। এলাকাত অভাব থাকির নেয় প্রতিশ্রুতিও দেওচে। সউগ প্রার্থী এক কথা কওচে। ভোট গেইলে তো আর চিনবার নেয়। তাই, দেখিশুনি ভোট দিমো।’

ইকরচালী বাজারে কথা হয় প্রামাণিকপাড়া গ্রামের দিনমজুর কালা মিয়ার (৪৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাই একটি ভোট, প্রার্থী অনেক। সবাইকে তো আর ভোট দেওয়া যায় না। এবার প্রার্থীর অনুরোধ শুনিম না, মিষ্টি কথায় ভোট দেইম না। নিয়াত করছু মূল্যবান ভোটটা সৎ লোকোক বাছি দেইম।’

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঝাঁকুয়াপাড়া গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় কথা হয় কুর্শা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী আফজালুল হকের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছর আমি চেয়ারম্যান পদে থেকে এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। কুর্শা ইউনিয়নকে মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়তে নৌকা প্রতীক নিয়ে ফের চেয়ারম্যান পদে লড়ছি। ভোটারদের প্রতীক চেনাতে মাঠে নেমেছি। দিনরাত কাজ করছি। এবারও ভোটাররা আমাকে নিরাশ করবে না।’

ওই দিন বিকেল তিনটায় সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বাজারে ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন আজমকেও ভোট চাইতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচটি বছর আমি জনগণের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থেকেছি। এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। আমি এবার নির্বাচিত হলে সয়ার ইউনিয়নকে আদর্শ ইউনিয়ন হিসেবে উপহার দেব।’

বিকেল চারটার দিকে দোয়ালীপাড়া গ্রামে আলমপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী রবিউল ইসলাম ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার মার্কা মোটরসাইকেল। ভোটের বেশি সময় নেই। আমার মার্কা চেনানোর জন্য ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। ভোট ভিক্ষা চাচ্ছি। ভোটাররা আমাকে ভোট দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’

বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বরাতির বাজারে ভোট প্রার্থনার সময় কথা হয় ইকরচালী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, দুখি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে প্রার্থী হয়েছি। গত নির্বাচনে প্রায় ২০০ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতে পারিনি। এবার যেখানে যাচ্ছি সেখানেই সাড়া পাচ্ছি। ভোটাররা আমাকে সাহায্য–সহযোগিতা করছেন। আমার বিশ্বাস, তারা আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করবে।

ওই দিন সকাল সাড়ে নয়টায় হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের একমাত্র নারী চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদা আখতারকে মেনানগর গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে নারীদের কাছে তাঁর আনারস মার্কায় ভোট চাইতে দেখা গেল। তিনি বলেন, ‘নারীরাই আমার ভোট ব্যাংক। একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে এলাকার নারী ভোটাররা আমাকে ভুলে যাবেন না। আমার ভোট লুকিয়ে আছে নারীদের মনে মনে। তাঁরা এর প্রতিফলন ঘটাবেন ভোটের দিন।’

সয়ার ইউনিয়নের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রব্বানীকেও হাজীরহাট এলাকায় ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে দেখা যায়। তিনি ভোটারদের দোয়া চেয়ে বলেছেন, জয়ী হতে পারলে এলাকার চিত্র বদলে দেব। বাবার মতো সারা জীবন আপনাদের বিপদ–আপদে পাশে থাকব। গরিবের হক মেরে খাবো না। সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব।