Thank you for trying Sticky AMP!!

দেশসেরা খামারি আমিরুল

হতে চেয়েছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। কিন্তু বাবার মৃত্যুতে সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। একমাত্র ছেলেসন্তান হওয়ায় হাল ধরতে হলো সংসারের। চৈত্রের বিকেলে গ্রামের মেঠো পথ ধরে হেঁটে ও কিছু দূর মোটরসাইকেলে চড়ে আসতে হলো আমিরুল ইসলামের গরুর খামারে, গ্রামের পাকা সড়ক থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের বরমপুর গ্রামে আমিরুল ইসলামের এই খামারের নাম ‘তন্ময় ডেইরি ফার্ম’।

চার বিঘা জমির ওপর এই খামার একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যবস্থা। শুধু দুধ নয়, গরুর গোবর থেকে তৈরি হচ্ছে বায়োগ্যাসও। তাতেই মিটছে নিজ বাড়ির রান্না ও গৃহস্থালি কাজে জ্বালানির চাহিদা। আবার গোবর থেকে তৈরি করা হচ্ছে কেঁচো কম্পোস্ট জৈব সার।

আমিরুলের খামারে সব মিলিয়ে ১২৮টি সংকর জাতের গরু রয়েছে। বর্তমান বাজারদর হিসাবে আমিরুলের খামারে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। প্রতিদিন তিনি ৪৬০ থেকে ৫৫০ লিটার দুধ উৎপাদন ও বিক্রি করেন। প্রতি লিটার ৪০ টাকা হিসাবে তাঁর দৈনিক গড় বিক্রি ২২ হাজার টাকা। বছরে খামার থেকে ৫০টির বেশি বাছুর বিক্রি করেন তিনি। এ থেকে ২০-২৫ লাখ টাকা আয় হয়। শুধু গরুর খামার নয়, পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে ছাগলের একটি খামার। এ খামারে বর্তমানে ছাগল আছে ২৪টি।

তবে বিশাল এই খামার খুব সহজে হয়নি। বাবার মৃত্যুতে বন্ধ হয়ে যায় কৃষির আয়ের উৎসও। আমিরুল ইসলাম তাঁর মায়ের প্রেরণায় গরুর খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। ১৯৯৪ সালে উপজেলার পাকশীর রূপপুর থেকে ১৪ হাজার ৬০০ টাকায় একটি সংকর জাতের গাভি কেনেন। গাভিটি বাড়িতে নিয়ে আসার কয়েক মাস পর একটি ষাঁড় বাচ্চা প্রসব করে। সে সময় গাভি থেকে প্রতিদিন ১৩-১৪ লিটার দুধ পেতেন। এরই মধ্যে ষাঁড়টি ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। জমিয়ে রাখেন সেই টাকা। গাভিটি দুই বছরে দুটি বকনা বাচ্চা প্রসব করে। এভাবেই আমিরুলের গরুর খামার বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। গচ্ছিত টাকার সঙ্গে মায়ের দেওয়া আরও কিছু টাকা যুক্ত করে আমিরুল তাঁর বাড়িতে তৈরি করেন খামারের শেড। এভাবে শুরু হয় আমিরুলের বাণিজ্যিক খামারের যাত্রা।

খামারে গরুর পরিচর্যা করছেন আমিরুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো

খামারি আমিরুল ইসলামের স্বপ্ন এলাকায় একটি বৃহৎ পরিসরে দুধের পল্লি গড়ে তোলা। ওই পল্লির বৈশিষ্ট্য হবে স্বল্প মূল্যে দুগ্ধজাতীয় ও শিশুদের পুষ্টি মেটাতে সুস্বাদু খাবার তৈরি করা।

আমিরুল একজন আদর্শ গবেষকের মতো সংরক্ষণ করেন বিভিন্ন গরুর জাতের ইতিহাস। এই জ্ঞান কাজে আসে গবেষকদেরও। ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে তাঁর এ খামার থেকে হাতে-কলমে শিক্ষা নেন।

সম্প্রতি সেরা খামারি (গরু) ক্যাটাগরিতে তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার পেয়েছেন দেশসেরা এই গরুর খামারি।