Thank you for trying Sticky AMP!!

দেড় বছরের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু করা সম্ভব হবে

শামীম জেড বসুনিয়া

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে একসময় অনেক জল ঘোলা হয়েছিল। দুর্নীতি নিয়ে অহেতুক মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছিল। ফলে সেতুটা হবে কি না, তা নিয়ে একসময় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সরকারপ্রধানের একক সাহসী সিদ্ধান্তে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু এখন রূপান্তরের দিকে যাচ্ছে। আশা করছি, দেড় বছরের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু করা সম্ভব হবে।

আমাদের নিজের টাকায় পদ্মা সেতু হচ্ছে, এটা জাতির জন্য বিরাট গৌরবের, আত্মমর্যাদার। সম্মানেরও বটে। আরেকটা কথা না বললেই নয়, পদ্মা সেতুর বদান্যতায় একসঙ্গে রেলসেতুটাও হয়ে যাচ্ছে। এটা অবশ্যই বড় পাওয়া। দক্ষিণাঞ্চলে রেললাইন নেই। পদ্মা সেতুর কারণে একসঙ্গে যশোর পর্যন্ত রেললাইনও হয়ে যাওয়া বিশাল অর্জন।

আমাদের মনে রাখতে হবে, সেতুটি এমন এক নদীর ওপর হচ্ছে, যেটি পৃথিবীর অন্যতম খরস্রোতা নদী। এখানে পলি এত বেশি যে ১ বছরে ১০ মিটার পলি জমে গেছে। পলি জমাতে পানি যেতে পারত না। ফলে এখানে নদীশাসন খুবই কষ্টসাধ্য বিষয়। পদ্মা এমন এক নদী, যেটি একেক সময় একেক রূপ ধারণ করছে। ফলে নদীশাসন করতে গিয়ে
আমাদের সময় আরও বেশি লাগবে। সম্প্রতি একটা অঘটন ঘটেছে। পবিত্র কোরবানির ঈদের আগের রাতে পদ্মা নদীর একটি অংশে ভাঙন শুরু হয়। নদীর যেখানে ভাঙন শুরু হয়, সেখানে (স্ট্রাইক ইয়ার্ড) পদ্মা সেতু তৈরির অনেক উপকরণ রাখা ছিল। সেতু তৈরির অনেক উপকরণ নদীগর্ভে চলে গেছে। যদিও আমরা খুব কম সময়ে সেই ভাঙন প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি।

পদ্মা সেতু করতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল পিয়ারের নিচে পাইল বসাতে গিয়ে। পানির নিচে কোথাও ১১৪ মিটার, কোথাও ১১৬ মিটার কোথাও ১১৮ মিটার পর্যন্ত যেতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পানির গভীরতা ছিল মাওয়া অংশে। তাই সেখানে পিয়ারের নিচে পাইল বসাতে সমস্যা হয়েছে। দুনিয়াতে এত গভীরে পিয়ারের নিচে পাইল বসানোর ঘটনা ছিল না। এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের ছিল।

পদ্মা সেতু করতে গিয়ে মানের বেলায় কোনো ধরনের আপস করা হয়নি। সবকিছুই ছিল স্বচ্ছ। মোট প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এর মধ্যে শুধু সোয়া ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু বানাতে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। নদীশাসনে যাচ্ছে আট হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা খরচ হয়েছে মাওয়া অংশে অ্যাপ্রোচ সড়ক, জাজিরা অংশে অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং বিভিন্ন পরিষেবা নির্মাণে। সব হিসাব স্বচ্ছ। তাই এককথায় বলা যায়, পদ্মা সেতুতে কোনো বিচ্যুতি হয়নি।

এই যে ঢাকা শহরে এত পরিবর্তন হচ্ছে, ৩৯ তলা, ৪০ তলা ভবন হচ্ছে, এসব পরিবর্তন হচ্ছে দেশের প্রকৌশলীদের হাত ধরেই। পদ্মা সেতুতে যেসব ভারী যন্ত্রপাতি চীন, সুইজারল্যান্ড, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে, সেগুলো তত্ত্বাবধান করেছেন আমাদের প্রকৌশলীরাই। অন্তত ৫০ জন প্রকৌশলী যন্ত্রপাতির মান নিশ্চিত করার কাজ করেছেন। এ ছাড়া সরাসরি পদ্মা সেতুতে কাজ করেছেন আরও ২০ প্রকৌশলী। সব মিলিয়ে ৭০ জন দেশীয় প্রকৌশলী পদ্মা সেতুর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছেন প্রকৌশলীরা। তবে মূল বিষয় হলো আমাদের নীতিনির্ধারকেরা প্রকৌশলীদের বিশ্বাস করেন? তাঁরা প্রকৌশলীদের দিয়ে বড় বড় কাজ করতে দেবেন? দেবেন না। আমাদের প্রকৌশলীরা বিদেশের মাটিতেও বড় বড় অনেক কাজ করছেন। সেই সক্ষমতা আমাদের আছে। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।

পদ্মা সেতু তৈরি হয়েছে মূলত দেশীয় উপকরণ দিয়ে। সেতু তৈরিতে সবচেয়ে বেশি লাগে দুটি উপকরণ। একটি হলো স্টিল, অন্যটি সিমেন্ট। আমি বলব, আমাদের দেশে যথেষ্ট ভালো মানের সিমেন্ট ও স্টিল তৈরি হয়। শুধু স্টিল আর সিমেন্টই নয়, রড, বালু, পাথরসহ অন্য যেসব উপকরণ পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত হয়েছে, সব উপকরণই ছিল সর্বোচ্চ মানের। যারা এসব উপকরণ সরবরাহ করেছে, তারা সবাই ছিল সতর্ক। তাই পদ্মা সেতুতে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কোনো সুযোগই ছিল না।

এম শামীম জেড বসুনিয়া: ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ইমেরিটাস অধ্যাপক