Thank you for trying Sticky AMP!!

দ্বন্দ্ব ভুলে সম্প্রীতির ঘোষণা

নড়াইলের লোহাগড়ার গণ্ডব-চালিঘাট গ্রামে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে গতকাল বিকেলে দুই পক্ষের মাতবরের মধ্যে হাত মিলিয়ে দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। প্রথম আলো

তুচ্ছ ঘটনায় হয় হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও লুটপাট। হতে হয় আসামি। আসামি হয়ে পুরুষদের থাকতে হয় বাড়িছাড়া। বাড়িতে আতঙ্কে থাকে নারী ও শিশুরা। এ কারণে বন্ধ থাকে চাষাবাদ ও ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। এতে নিঃস্ব হয় মানুষ।

দুই বংশের আধিপত্য ধরে রাখার লড়াইয়ে এই দ্বন্দ্ব-সংঘাত দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গন্ডব-চালিঘাট গ্রামে। আশার কথা, দাঙ্গাপ্রবণ এই গ্রামে গতকাল বুধবার বিকেলে হলো শান্তি সমাবেশ। ‘সম্প্রীতির বন্ধন’ নামের এই সমাবেশের আয়োজন করে জেলা পুলিশ প্রশাসন। সমাবেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিল বিবদমান দুই পক্ষ। সমাবেশ শেষে উভয় পক্ষকে হাতে হাত মিলিয়ে দেওয়া হয়। উভয় পক্ষের মাতবরেরা কুলাকুলিও করেন। 

ওই গ্রামের কয়েকজন প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, কয়েক দশক ধরে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মোল্লা বংশ ও শেখ বংশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। একসময়ে মোল্লা বংশের নেতৃত্ব দিয়েছেন সুলতান মোল্লা। এরপর নেতৃত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা মোল্লা ও আবদুল হামিদ মোল্লা। বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মিরাজ মোল্লা। শেখ বংশে দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম। বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রফিকুল ইসলামের ছেলে জেলা পরিষদের সদস্য বিপ্লব শেখ। প্রবীণ বাসিন্দারা দীর্ঘশ্বাস টেনে বলেন, আগে যাঁরা নেতৃত্ব দিতেন, তাঁদের মধ্যে সহনশীলতা ছিল, ছিল মানবিকতা। কিন্তু এখন চলছে মারাত্মক প্রতিহিংসাপরায়ণতা।

গ্রামের লোকজন বলেছেন, বর্তমানে সামান্য কথায় বা অতি তুচ্ছ ঘটনায় ঘটে হানাহানি। এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাতে গ্রামের হয়তো সর্বোচ্চ ২০ জনের তৎপরতা বেশি। অথচ তাঁদের কাছে জিম্মি গ্রামের প্রায় চার হাজার মানুষ। কিছুদিন আগে গ্রামের বাসিন্দা পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দুই পক্ষকে নিয়ে বিরোধ মেটাতে বৈঠক করেন। বৈঠকে সবাই মিলেমিশে থাকবেন বলে কথা দেন। এর কয়েক দিন পর প্রতিপক্ষের হাতুড়িপেটার শিকার হন এক যুবক। 

 গ্রামবাসী জানান, সর্বশেষ গত ৩১ জানুয়ারি গ্রামে হামলা ও ভাঙচুর এবং পাল্টা হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। 

 ‘আর সংঘাত চাই না, শান্তি চাই’—গতকালের সমাবেশে এ ঘোষণা দিয়েছেন উভয় পক্ষের মাতবরেরা। উভয় পক্ষের মাতবরেরাই বললেন, ‘জেলা পুলিশ প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা এ শান্তি সমাবেশ করলেন। বিষয়টি তাঁরা খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। এটা আমাদের এখন উপলব্ধিতে আনতে হবে।’ 

গতকাল বিকেলে এ শান্তি সমাবেশ হয় গ্রামের নবগঙ্গা নদীর নির্মাণাধীন সেতুর ওপরে। এতে সভাপতিত্ব করেন লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। লোহাগড়া থানার উপপরিদর্শক মিলটন কুমার দেবদাসের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন স্থানীয় সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজার বাবা গোলাম মুর্তজা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন, সহসভাপতি এ কে এম ফয়জুল হক ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মশিয়ূর রহমান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান প্রমুখ। 

 পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে গ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই বর্বরতা চলতে পারে না। এতে নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এটি নিজেদের বুঝতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। মিলেমিশে থাকতে হবে, না হলে আইনের কঠোর ও নিরপেক্ষ প্রয়োগ হবে।’