Thank you for trying Sticky AMP!!

নবান্নে শতবর্ষী মাছের মেলা ঘিরে মানুষের উৎসব

প্রায় ১৮ কেজি জ্যান্ত কাতলা মাছ তুলে ধরে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন বিক্রেতা স্বপন চন্দ্র রায়। আজ বৃহস্পতিবার বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলী মাছের মেলায়

হেমন্তের সকালে সিগ্ধ রোদ। বগুড়ার মোকামতলা-জয়পুরহাট আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে শোনা যাচ্ছে মাইকের শব্দ। একটু কান পাতলে ভেসে আসে মানুষের গমগম শব্দ। মহাসড়ক থেকে নেমে ইট বিছানো সড়ক ধরে ছুটছে মানুষ। কেউবা পায়ে হেঁটে, কেউ সাইকেলে, আবার কেউ ভ্যান, অটোরিকশায় বা ব্যক্তিগত গাড়িতে। মানুষের সেই স্রোত ধরে এগিয়ে দেখা গেল— সবার গন্তব্য নবান্নের মাছের মেলা।

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলী হাটে আজ বৃহস্পতিবার বসেছে মাছের মেলা। মেলায় এসেছে বিশাল বিশাল মাছ। ২৫ কেজি, ৩০ কেজি ওজনের মাছ উঠেছে মেলায়। মাছের মেলা ঘিরে বসেছে অন্যান্য দোকানপাটও। বৃটিশ আমল থেকে চলে আসা এই মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন দর্শনার্থীরা।

মেলায় ঢুকেই সারি সারি দোকানগুলোতে চোখে পড়ে মনজুড়ানো সব মাছের পসরা। দূর–দূরান্ত থেকে মাছ বিক্রেতারা এসেছেন। তাঁদের দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো মাছগুলো প্রায় সবই বড় আকারের। মেলায় ছোট মাছ নেই বললেই চলে। রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, ব্ল্যাক কার্প, পাঙাশ মাছ। চাষের মাছের পাশাপাশি নদীর বাগাড়, গাঙ চিতল এবং দু-এক প্রকারের সামুদ্রিক টুনা মাছও উঠেছে। ক্রেতাসমাগমও ব্যাপক। সবাই দরদাম করে মাছ কিনছেন। আকারভেদে ৩০০ থেকে ১২০০ টাকায় প্রতি কেজি মাছ বিক্রি হচ্ছে।

মেলায় ঘুরে ঘুরে পছন্দের মাছ কিনছেন ক্রেতারা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ এলাকা থেকে মেলায় এসেছেন শৈবাল বর্মণ নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উঠেছে। বেশির ভাগ পুকুরে চাষ করা মাছ। কয়েকটি দোকানে উঠেছে নদী ও সামদ্রিক মাছ। তিনি পছন্দ করে টুনা জাতের দুটি মাছ ১ হাজার ৪০০ টাকায় কিনেছেন।

মেলায় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন সাগরী রানী দাস। বাড়ি উপজেলার বড় নারায়ণপুর গ্রামে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেলায় বড় বড় মাছ আসছে দেখলাম। পছন্দের একটা মাছ লেওয়া লাগবি। তাই ঘুরে ঘুরে দেখছি। মেলার বয়স আনেক। এখন হামরা বয়স ৩৬। ছোটত থাকাই হামি এই মেলায় আসি।’

মেলা উপলক্ষে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মাছ এনেছেন স্বপন চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘ছোটত থাকি মাছ বিক্রি করি আমরা। মাছই হামার ব্যবসা। মাছ নিয়েই জীবনের খেলা। ৩৬ বছর ধরা হামরা এই নবান্নে দিনে মাছের মেলা করি।’

মেলায় মাছ বিক্রির জন্য গাবতলীর মধ্যমার ছেও গ্রাম থেকে এসেছেন দিপক চন্দ্র রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছোটবেলা থেকে বাবার সঙ্গে মাছ বিক্রির জন্য আসতেন। এখন কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে একটি ট্রাকে ভরে জ্যান্ত মাছ বিক্রির জন্য এসেছেন। প্রতিটি মাছের ওজন ১৬ থেকে ২০ কেজি।

শিশুদের জন্য মেলায় বসানো হয়েছে নাগরদোলা

নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা প্রতিবছর বসে পয়লা অগ্রহায়ণে। তবে তারিখটি সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি মেনে নয়, পুরোনো বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে। হিন্দুধর্মাবলম্বীরা পুরোনো বাংলা বর্ষপঞ্জি ধরেই তাদের পূজা-উৎসব ও পার্বণের দিনক্ষণ ঠিক করে। ওই পঞ্জিকা অনুসারে আজ বৃহস্পতিবার পয়লা অগ্রহায়ণ।

আশপাশের রথবাড়ি, গরীবপুর, বেড়া বালা, মোকামতলা, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, রহবলসহ জয়পুরহাটের কালাই উপজেলাসহ আশপাশের গ্রাম থেকেও লোকজন মেলায় ছুটে আসেন। শিবগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২২টি গ্রামসহ জয়পুরহাটের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ প্রতিবছর পয়লা অগ্রহায়ণে মাছের মেলার উৎসবে মেতে ওঠেন। মাছ আর নতুন চালের ভাত খাওয়াতে গ্রামের লোকজন তাঁদের জামাতা ও মেয়েকে দাওয়াত করেন। আত্মীয়স্বজনকেও দাওয়াত করা হয়। উৎসব পালন করতে এদিন সব ব্যস্ততা বন্ধ রাখেন তাঁরা। মাছের মেলায় যান। যাঁর যাঁর সাধ্যমতো মাছ কেনেন।

মেলায় চিড়া, গুড়, মুড়ি, মোয়ার পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থেকে স্বামীর সঙ্গে মেলায় এসেছেন তনুশ্রী রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মেলার পাশের গরীবপুর গ্রামে তাঁর শুশুরবাড়ি। চাকরির সুবাদে বাইরে থাকেন। মেলা উপলক্ষে মূলত তিনি বেড়াতে এসেছে। তিনি বলেন, ‘মেলায় এসে খুব ভালো লাগছে। এটা দেখার মতো একটা মেলা। দেখছি বড় বড় নানা প্রজাতির মাছ।’

উথলী হাটের ইজারাদার আজিজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় শতাধিক বিক্রেতা মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ভোর থেকে চলা দিনব্যাপী এই নবান্নের মাছের মেলায় বেচা–বিক্রি প্রায় কোটি টাকার বেশি।