Thank you for trying Sticky AMP!!

নাটোর-১ সাংসদ শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী। আজ বুধবার দুপুরে নাটোরের সাহারা কমিউনিটি সেন্টারে।

নাটোরে সাংসদ শহিদুলের বিরুদ্ধে আ.লীগের সংবাদ সম্মেলন

লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দাবি, তাঁরা সাংসদকে দলীয় রীতিনীতি মেনে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। জেলা আওয়ামী লীগকে বিষয়টি জানালে সাড়া মেলেনি। করোনার কারণে দেখা করতে না পারায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় নেত্রীর বরাবর তাঁদের কথা জানাচ্ছেন।

কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে হেয়প্রতিপন্ন করা ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সাংসদ শহিদুল ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে লালপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। জিডিটি করেছেন লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন জুলফু। মঙ্গলবার রাতে এই জিডি দায়েরের বিষয়টি আজ বুধবার নাটোর শহরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেন লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ইসহাক আলী।

সাংসদ শহিদুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, তিনি কাউকে গালিগালাজ করেননি বা হুমকি দেননি। কেউ যদি কিছু বলে থাকেন, তাহলে তাঁদের ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে বলে থাকতে পারেন। কারণ, ইট মারলে তো পাটকেল খেতে হয়।

আমি আমার বক্তব্যে কাউকে অসম্মান করে কথা বলিনি। আমি কাউকে হুমকিও দিইনি। মঞ্চের অন্য বক্তারা যদি কিছু বলে থাকেন, তাহলে তা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। অভিযোগকারী নেতারা বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমার সঙ্গে থাকা নেতাদের উদ্দেশে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তাঁরাও সেই ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। ইট মারলে তো পাটকেল খেতে হবে।
শহিদুল ইসলাম, নাটোর-১ আসনের সাংসদ

আজ দুপুরে নাটোর শহরের সাহারা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইসহাক আলী। তিনি সাংসদ শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক রীতিনীতি অগ্রাহ্য করা, দলীয় মূলধারার বাইরের ব্যক্তিদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করা ও সেসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের গালিগালাজ করার অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে সাংসদকে ভুল স্বীকার করে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করার আহ্বান জানানো হয়।

লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাংসদ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাঁর সহোদর ওহিদুল ইসলামকে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে দাঁড় করিয়ে দেন এবং নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করান। ওহিদুলের দলে কোনো পদ নেই। এরপর থেকেই সাংসদ লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। উপজেলা পর্যায়ের সভাপতি ও সম্পাদকদের না জানিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। এসব কর্মসূচিতে মূলধারার রাজনীতিবিদদের দেখা মেলে না। অথচ তাঁতী লীগ, সৈনিক লীগের মতো নামসর্বস্ব সংগঠনের হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে মঞ্চে বসেন।

সাংসদ শহিদুল ইসলাম

সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট বিকেলে লালপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীর শোকসভায় সাংসদ শহিদুল ইসলামের উপস্থিতিতে সাবেক সাংসদ মমতাজ উদ্দিনের ছেলে শামীম আহম্মেদ, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসাধারণ সম্পাদক আলাল উদ্দিন ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান—সাংসদের ঘনিষ্ঠ এই তিনজন সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ (জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি), লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ও সম্পাদক ইসহাক আলীকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাঁরা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে তাঁদের সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেন এবং প্রকাশ্যে হুমকি দেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আফতাব হোসেন বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে লালপুর থানায় তাঁদের চারজনের বিরুদ্ধে জিডি (নম্বর-৩১, তাং-১.৯.২০২০) করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করা হয়, পুলিশ প্রশাসন সঠিক তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

সাংসদ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাঁর সহোদর ওহিদুল ইসলামকে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান পদে দাঁড় করিয়ে দেন এবং নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করান। এরপর থেকেই সাংসদ লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপজেলা পর্যায়ের সভাপতি ও সম্পাদকদের না জানিয়ে তাঁতী লীগ, সৈনিক লীগের মতো নামসর্বস্ব সংগঠনের হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে মঞ্চে বসেন।
ইসহাক আলী, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক

সংবাদ সম্মেলনে আফতাব হোসেন বলেন, ‘আমাদের সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী সাংসদের দুলাভাই। আমরা প্রথমে তাঁর মাধ্যমে সাংসদকে দলীয় রীতিনীতি মেনে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। পরে আমরা জেলা আওয়ামী লীগকে বিষয়টি জানিয়েছি। সেখানে সাড়া মেলেনি। করোনার কারণে দলীয় নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারিনি। তাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নেত্রীর বরাবর আমরা আমাদের কথা জানাতে চাচ্ছি।’

সাংসদের আসনের আরেক উপজেলা বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সাংসদ নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়যুক্ত হয়েই উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজের ভাইকে চেয়ারম্যান পদে দাঁড় করিয়েছেন। এর জন্য তাঁকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছে। কিন্তু এরপরও তিনি সংশোধন হননি। তিনি আমাদের ছাড়াই হাইব্রিড কর্মীদের নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন। আমাদের দল সরকারে থাকলেও আমরা বেসরকারি আওয়ামী লীগ হয়েই থাকলাম।’

নাটোর-১ সাংসদ শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে জিডির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন জুলফু। আজ বুধবার দুপুরে নাটোরের সাহারা কমিউনিটি সেন্টারে।

সাংসদ ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জিডি প্রসঙ্গে বলেন, ‘৩১ আগস্টের কর্মসূচিতে আমি আমার বক্তব্যে কাউকে অসম্মান করে কথা বলিনি। আমি কাউকে হুমকিও দিইনি। মঞ্চের অন্য বক্তারা যদি কিছু বলে থাকেন, তাহলে তা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। অভিযোগকারী নেতারা বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমার সঙ্গে থাকা নেতাদের উদ্দেশে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তাঁরাও সেই ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। ইট মারলে তো পাটকেল খেতে হবে।’

নিজের ভাইকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করার ব্যাপারে সাংসদ বলেন, ‘আমি তাঁকে নির্বাচন করতে নিষেধ করেছিলাম। আমি তাঁকে সহযোগিতাও করিনি। তিনি তাঁর যোগ্যতাবলে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন।’ দলীয় কর্মসূচিতে নেতাদের না ডাকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘কর্মসূচি তো সাংসদ করেন না। দলীয়ভাবে আয়োজন করে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা। কিন্তু গত দেড় বছরে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ কোনো কর্মসূচি পালন করেনি।’ দলকে গতিশীল রাখতে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে কর্মসূচি পালন করেন, তাতে দলীয় নেতা-কর্মীরাই থাকেন বলে সাংসদ শহিদুল দাবি করেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে ভুল স্বীকার করে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতি করার আহ্বান প্রসঙ্গে সাংসদ বলেন, ‘আমি ভুল করিনি। তাই ভুল স্বীকার করার প্রশ্নই ওঠে না। তবে তাঁরা যদি পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আমাকে ডাকে, আমি যাব। কিন্তু কেউ যদি ব্যক্তিগত লালসা পূরণের জন্য কর্মসূচি দেয়, তাহলে সেখানে আমি যাব না।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বাগাতিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ও বিভিন্ন ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত আটজন ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।

লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা সাংসদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জিডিটি দেখে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।